একটি সরকারি হাসপাতালের সাতজন কর্মী ও আধিকারিকের বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে বিহারে। সূত্রের দাবি, হাসপাতালের দুই কর্মী নাকি ওপরতলার নির্দেশে অজ্ঞাতপরিচয় দুই রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে গিয়ে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় ফেলে আসেন! সেই দুই রোগীর মধ্যে একজনের দেহ ইতিমধ্যেই উদ্ধার করা হলেও অন্যজনের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি বলে দাবি করা হচ্ছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত যেটুকু জানা গিয়েছে, তা হল - গত ১২ নভেম্বর বিহারের বারুন থানার পুলিশ স্থানীয় পোখারি মন্দিরের কাছে বছর পঞ্চাশের এক ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, দেহটি লাল-সাদা রঙের একটি চাদরে মোড়া ছিল। সেই চাদের লেখা ছিল - রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য মিশন! তদন্তে নেমে পুলিশ একজন প্রত্যক্ষদর্শীর সন্ধান পায়। তাঁর কাছ থেকে জানা যায়, তিনি পোখারির দিক থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স আসতে দেখেছিলেন। সেই অ্যাম্বুল্যান্স থেকেই চাদরে মোড়া কিছু একটা রাস্তার পাশে ছুড়ে ফেলা হয়! তারপর অ্যাম্বুল্যান্সটি সিরিসের দিকে চলে যায়।
এরপর পুলিশ সেই দেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। বরুন থানার আধিকারিক সৌরভ কুমার জানিয়েছেন, 'এই ঘটনায় গত ১৪ নভেম্বর রিপোর্ট দায়ের করা হয়। মৃতদেহের বর্ণনা চারিদিকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত ওই ব্যক্তির পরিচয় জানা যায়নি।'
ঘটনার তদন্তের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্তকারী দল গঠন করে দেয় জেলা প্রশাসন। সেই তদন্তে উঠে আসে যে দুই অজ্ঞাত পরিচয় রোগীকে হাসপাতাল থেকে বের করে বাইরে ফেলে আসা হয়েছে!
ইতিমধ্যেই তদন্তকারী দলের সদস্যরা তাঁদের রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে জমা করেছেন। পরবর্তীতে জেলাশাসকের নির্দেশে মোট সাতজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়। বৃহস্পতিবার দায়ের হওয়া সেই অভিযোগে নাম রয়েছে - মডেল সদর হাসাপাতালের ডেপুটি সুপারিনটেন্ডেন্ট এবং ম্যানেজারেরও।
সৌরভ কুমার জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা ওই হাসপাতালের ভিতরের ও বাইরের এবং যেখান থেকে একটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল, সেই এলাকার আশপাশের সমস্ত জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখেছেন। তাতে দেখা গিয়েছে, হাসপাতালের দুই কর্মী দু'জন রোগীকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে রওনা দিচ্ছেন।
হাসপাতালের ম্যানেজার হেমন্ত রাজনকে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেন, ওই দুই রোগী মানসিকভাবে অসুস্থ ছিলেন। তাই তাঁদের অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। কিন্তু, সেই সংক্রান্ত কোনও নথি তিনি দেখাতে পারেননি।
পরবর্তীতে হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট দুই কর্মীকে জেরা করা হলে তাঁরা সব কীর্তি ফাঁস করে দেন বলে দাবি পুলিশের। ওই দুই কর্মী স্বাীকার করেন, ঘটনার সময় ওই দুই রোগীই জীবিত ছিলেন। এমনকী, তাঁদের মধ্যে একজনের অবস্থা যথেষ্ট ভালো ছিল। তবে, অন্যজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ছিল।
ওই দুই কর্মীর দাবি, ওপরতলার নির্দেশেই তাঁরা প্রথম রোগীকে টেংরা মোড় এলাকায় ছেড়ে আসেন এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীটিকে চাদরে মুড়ে একটি মন্দিরের কাছে ফেলে আসেন! পরে সেই রোগীরই দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।