কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে শুরু হয় তুমুল হিংসা–সংঘর্ষ–ঘেরাও। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, প্রধানমন্ত্রী পদে ইস্তফা দিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করতে হয় শেখ হাসিনাকে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বোন রেহানা। গত পাঁচ দশক ধরে ছায়ার মতো যিনি দিদির পাশে থেকে পরামর্শদাতার ভূমিকা পালন করেছেন। শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে সামলেছেন পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের তৈরি আওয়ামী লিগ। আশির দশকে বাংলাদেশে ফিরে আওয়ামী লিগের নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। তখন থেকেই বোন রেহানা তাঁর ছায়াসঙ্গী।
শেখ হাসিনা তাঁর রাজনৈতিক জীবনে মাত্র একবার গ্রেফতার হয়ে জেলে গিয়েছিলেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জমানায় সেটা ঘটেছিল। তখন তোলাবাজির মামলায় তাঁকে ধানমন্ডির বাড়ি ‘সুধা সদন’ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ ও আধাসেনা। তখন হাসিনার অনুপস্থিতিতে দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাঁর বোন রেহানা। তারপর থেকেই দুই বোনের একসঙ্গে পথচলা শুরু। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগস্ট ঢাকার ৩২ নম্বর ধানমন্ডির সরকারি বাসভবনে অভ্যুত্থানকারী সেনাদের গুলিতে খুন হন তাঁদের পিতা মুজিব এবং পরিবারের অন্য সদস্যরা। তখন জার্মানিতে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন মুজিবের দুই মেয়ে হাসিনা ও রেহানা।
আরও পড়ুন: এবার পদ্মার ইলিশের জোগান কমল মারাত্মক হারে, সীমান্তের বাজারগুলিতে দাম বৃদ্ধি
তখন তপ্ত আবহে ভারতের তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সৌজন্যে নয়াদিল্লিতে রাজনৈতিক আশ্রয় পান দুই বোন। এবারও পেলেন তবে একটু অন্যভাবে। ১৯৮১ সালে বিদ্রোহী সেনাদের গুলিতে সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের মৃত্যু হয়। আর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করে। এই আবহে বাংলাদেশে ফিরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন শেখ হাসিনা। এখন এই দুই বোনকে বাংলাদেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নিতে হয়েছে। কারণ ব্রিটেন রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে অস্বীকার করেছে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের রক্তঋণের সম্পর্ক। তাই এখানে এসেছেন। নিরাপদ আশ্রয়ে আছেন তাঁরা। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে কথা হচ্ছে বারবার। তবে কি কথা হচ্ছে তা জানা যায়নি।
শেখ হাসিনার বোন তিন সন্তানের মা রেহানার স্থায়ী ঠিকানা এখনও লন্ডন। তাঁর কন্যা টিউলিপ উত্তর–পশ্চিম লন্ডনের হ্যামস্টেড কিলবার্ন পার্লামেন্ট আসনে ২০১৫ সাল থেকে টানা চারবার লেবার পার্টির প্রার্থী হিসাবে জিতেছেন। মুজিবের নাতনি টিউলিপ প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হিসাবে প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টার্মারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পান। ব্রিটিশ নাগরিক রেহানা সেখানে যেতেই পারেন। কিন্তু তিনি আছেন দিদির সঙ্গেই। আর শেখ হাসিনার ছেলেও বিদেশে থাকেন। সেখানে শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেওয়ায় চাপ বেড়েছে ভারতের। কারণ বাংলাদেশে যদি জামাতের সরকার হয় তাহলে ভারতের উপর আক্রমণ নেমে আসতে পারে। পাকিস্তান তাদের সেনা এবং জঙ্গিদের বাংলাদেশ দিয়ে ঢুকিয়ে ভারতের উপর আক্রমণ করতে পারে। তার সঙ্গে চিন মদত দিলে সোনায় শোহাগা।