শিবসেনা নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় গতকালই সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। তবে সেই মামলার জরুরি শুনানি করতে অস্বীকার করে সর্বোচ্চ আদালত। অবশ্য আজ উদ্ধপন্থীদের সেই মামলা গ্রহণ করল সুপ্রিম কোর্ট। উদ্ধবের দাবি, শিবসেনার ওপর একনাথ শিণ্ডে গোষ্ঠীর কোনও অধিকার নেই। তাই এখনই যেন তাঁরা শিবসেনার সম্পত্তি এবং ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ওপর নিজেদের অধিকার না দেখাতে পারে। এর আগে 'তির-ধনুক' প্রতীক ফিরে পেতে শীর্ষ আদালতে মামলার আবেদন করে তা জরুরি ভিত্তিতে শুনানি করার জন্য বলেছিলেন উদ্ধবের আইনজীবী। তবে উদ্ধব পক্ষের জরুরি শুনানির আবেদন খারিজ করে দিলেন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। অবশ্য আজ মামলাটি গ্রহণ করা হয়েছে। এতে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখতে পারে উদ্ধব শিবির। (আরও পড়ুন: ডিএ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে শাসকদল, হকের দাবিতে গণপদত্যাগ তৃণমূলপন্থী শিক্ষকদের)
বিবাদের শুরু হয় গত বছরের মাঝামাঝি। সেই সময় মহারাষ্ট্রে মহা বিকাশ আঘাড়ি সরকার ভাঙতে ৩০-এর বেশি বিধায়ক নিয়ে ভিনরাজ্যে পাড়ি দেন একনাথ শিণ্ডে। কংগ্রেস ও এনসিপির সঙ্গে শিবসেনার জোট সরকারের পতন হয়। মুখ্যমন্ত্রিত্ব হারান উদ্ধব ঠাকরে। এর মাঝে গুজরাট, অসম ঘুরে আসেন একনাথ ও তাঁর অনুগামীরা। শেষ পর্যন্ত গোয়া হয়ে মুম্বইতে ফেরেন একনাথ। মনে করা হচ্ছিল, বিজেপির সঙ্গে নতুন জোট সরকাররে উপমুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন একনাথ। তবে সবাইকে অবাক করে শিণ্ডেকেই মুখ্যমন্ত্রী করে দেয় বিজেপি।
আরও পড়ুন: 'সাধারণ কর্মীদের ৩%, মুখ্যমন্ত্রীর সচিবকে কেন্দ্রীয় হারে DA', উঠল বৈষম্যর অভিযোগ
একনাথ শিণ্ডে দাবি করেন, দলের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিধায়ক এবং সাংসদ যেহেতু তাঁর সঙ্গে, তাই 'আসল' শিবসেনা তাঁর গোষ্ঠী। এই আবহে আদালতের দ্বারস্থ হন উদ্ধব ঠাকরে। ততদিনে শিবসেনা দু’ভাগ হয়ে যায়। একনাথ শিণ্ডে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হন শিবসেনার দখল নেওয়ার জন্য। এই আবহে সাময়িক ভাবে শিবসেনা নাম ও প্রতীক বাজেয়াপ্ত করে নির্বাচন কমিশন। তবে গত শুক্রবার নির্বাচন কমিশন শিবসেনা বিতর্কের অবসান ঘটান। এই নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। কমিশন জানায়, একনাথ শিণ্ডের গোষ্ঠীই হল বালাসাহেবের তৈরি 'আসল' শিবসেনার নেতা। কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে যে শিবসেনার বর্তমান সংবিধান অগণতান্ত্রিক। কোনও নির্বাচন ছাড়াই অগণতান্ত্রিকভাবে একটি গোষ্ঠীর লোকদের পদাধিকার বলে নিয়োগ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, দলের দখল রাখতে নিজের আস্থাভাজনদের নেতা পদে নিয়োগ করেছিলেন উদ্ধব ঠাকরে। তবে নির্বাচন কমিশন সেই নিয়োগকে বেআইনি আখ্যা দেয়।
কমিশন জানিয়েছে, ২০১৮ সালে শিবসেনার সংশোধিত সংবিধান কমিশনে জমা দেওয়া হয়নি। প্রসঙ্গত, এর আগে কমিশনের চাপে পড়ে ১৯৯৯ সালে প্রয়াত বালাসাহেব ঠাকরে তাঁর দলের সংগঠনে সংশোধনী এনেছিলেন। ২০১৮ সালের সংবিধানে সেই সব সংশোধনী বাতিল করা হয়েছিল। এই আবহে কমিশনের পর্যবেক্ষণ, শিবসেনার বর্তমান সংবিধান অগণতান্ত্রিক। ১৯৯৯ সালে এই সব নিয়ম কমিশন গ্রহণ করেনি। গোপন পদ্ধতিতে তা ফিরিয়ে আনা হয় ২০১৮ সালে। এখন নির্বাচন কমিশনের এই সব যুক্তির বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে দ্বারস্থ উদ্ধবপন্থীরা।