বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে কোভিড-১৯ অ্যান্টিভাইরাল ক্যাপসুলের অনুমোদন দিল ব্রিটেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্ক অ্যান্ড কো ইনকর্পোরেটেড এবং রিজব্যাক বায়োথেরাপিউটিকস যৌথভাবে এটি তৈরি করেছে। নাম 'মলনুপিরাভির'। শীঘ্রই মার্কিন মুলুকেও এটি ছাড়পত্র পেতে পারে।
করোনাভাইরাসের এই প্রথম ওরাল অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা এটি। ব্রিটেনের মন্ত্রী ম্যাগি থ্রুপ পার্লামেন্টে বলেন, 'সরকার এবং NHS এখন একসঙ্গে কাজ করছে। একটি প্রাথমিক সমীক্ষা করা হবে। অধিকাংশই টিকাপ্রাপ্ত, এমন পরিবেশে এই অ্যান্টিভাইরালের কার্যকারিতা যাচাই করা হবে।'
MHRA(মেডিসিনস অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্ট রেগুলেটরি এজেন্সি) মলনুপিরাভিরকে হালকা থেকে মাঝারি কোভিড আক্রান্ত এবং সেই সঙ্গে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের মতো গুরুতর অসুস্থতার মধ্যে একটি অন্তত আছে, এমন ক্ষেত্রে এই অ্যান্টিভাইরাল প্রয়োগের সুপারিশ করেছে।
ক্লিনিকাল ডেটা উদ্ধৃত করে MHRA বলেছে, করোনা পজিটিভ রিপোর্টের সঙ্গে সঙ্গে এই ওষুধ দিতে হবে। ভাইরাল রোগের লক্ষণগুলি শুরু হওয়ার পাঁচ দিনের মধ্যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওষুধ প্রয়োগ করা হবে। পাঁচ দিনের জন্য দিনে দুইবার করে ওষুধ খেতে হবে।
ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের (এনএইচএস) জাতীয় চিকিৎসা পরিচালক প্রফেসর স্টিফেন পোভিস জানালেন, 'উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের ওষুধটি দেওয়া হবে। হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু কমাতে সক্ষম হলে এই ওষুধ আরও বেশি জনগণকে সুপারিশ করা হবে।'
অ্যান্টিভাইরাল পিলটি ব্রিটেনে 'ল্যাগেভরিও' নামে ব্র্যান্ড করা হবে। এই ওষুধটি একটি এনজাইমকে লক্ষ্য করে, যা ভাইরাস পুনরুত্পাদন করতে ব্যবহার করে। এটি জেনেটিক কোডে ত্রুটি সৃষ্টি করে। ফলে ভাইরাস বৃদ্ধি, ছড়িয়ে দেওয়ার এবং দখল করার ক্ষমতাকে ধীর করে দেয়।
এদিকে এই জেনেটিক কার্যকলাপ নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন কিছু স্বাধীন বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মতে সমস্ত ঝুঁকির বিষয়ে পরীক্ষা প্রয়োজন। ওষুধটি সম্ভাব্য মিউটেশনের কারণ হতে পারে কিনা তা দেখতে হবে। নয়তো এটি জন্মগত ত্রুটি বা টিউমারের কারণ হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত করা ভাইরাল সিকোয়েন্সিং অনুযায়ী মলনুপিরাভির করোনাভাইরাসের সমস্ত ভেরিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর। যার মধ্যে অতি সংক্রামক ডেল্টা ভেরিয়েন্টও রয়েছে, যা সম্প্রতি হাসপাতালে ভর্তি বৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী মৃত্যু বৃদ্ধির জন্য দায়ী। প্রস্তুতকারকরা মলনুপিরাভিরের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিশদে প্রকাশ করেনি। তবে তারা বলেছে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার হার যাঁরা ওষুধ পেয়েছেন এবং যাঁরা ডামি বড়ি পেয়েছেন তাদের মধ্যে একই রকম।
সেপ্টেম্বরে প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করেছিল প্রস্তুতকারকরা। তাতে বলা হয়, এই ওষুধের ফলে কোভিড-এর প্রাথমিক লক্ষণ থাকা ব্যক্তিদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং মৃত্যুর ঘটনা অর্ধেক হয়েছে। তবে, ফলাফলগুলি এখনও সমকক্ষ পর্যালোচনা(পিয়ার রিভিউ) বা বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়নি।
মার্কিন উপদেষ্টারা আগামী ৩০ নভেম্বর এই ওষুধের সুরক্ষা এবং কার্যকারিতা ডেটা পর্যালোচনা করবেন। এরপর মলনুপিরাভির অনুমোদিত হওয়া উচিত কিনা তাই নিয়ে ভোট দেবেন তাঁরা।
প্রসঙ্গত, Pfizer এবং Roche-ও Covid-19-এর অ্যান্টিভাইরাল বড়ি তৈরির চেষ্টা করছে।