বাংলা নিউজ > ঘরে বাইরে > 'সারারাত বোমার শব্দ!' ইউক্রেনের প্রেম ও পোষ্যকে নিয়ে ভারতে ফিরলেন অন্বেষ

'সারারাত বোমার শব্দ!' ইউক্রেনের প্রেম ও পোষ্যকে নিয়ে ভারতে ফিরলেন অন্বেষ

ছবি : টুইটার (Twitter)

আপাতত ভারতে ফিরে যাওয়াই ভাল। ভারতীয় দূতাবাসের পরামর্শ পেয়ে কিছুক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলেন অন্বেষ উপাধ্যায়। অন্বেষ ইউক্রেনের কিয়েভের ৮ নং হাসপাতালের চিকিত্সক। গত ১০ বছর ধরে কিয়েভেই ঘরবাড়ি তাঁর। সেদেশেই খুঁজে পেয়েছেন প্রিয়তমাকে। সেখান থেকে সবকিছু ছেড়ে ফিরে আসা?

অগত্যা পদত্যাগ করেন তিনি। ২২ ফেব্রুয়ারি তাঁর পদত্যাগ গৃহীত হয়। ঠিক হয় ৩ মার্চের বিমানে ভারতে ফিরবেন। কিন্তু পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যায়। ৩ মার্চের উড়ান বাতিল হয়ে যায়। প্রেমিকা ভিক্টোরিয়া ইভানোভাকে ছেড়ে আসার কথাও ভাবতে পারেননি অন্বেষ। ভিক্টোরিয়ার হাত ধরেই ইউক্রেন থেকে পালানোর রাস্তা ধরেন। বহু কষ্ট করে অবশেষে ভুবনেশ্বরে এসেছেন দু'জনে। কেমন ছিল সেই যাত্রা? শুনুন অন্বেষের মুখেই :

২৪ ফেব্রুয়ারি

ভোর ৪টে। ভুবনেশ্বর থেকে আমার বাবার (ভুবনেশ্বরে) একটি টেক্সট আসল। নোটিফিকেশনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেল। দেখলাম, বাবা জানিয়েছেন, ইউক্রেন তার আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। আমায় জিজ্ঞেস করেছেন যে, আমি এয়ারলাইন থেকে কোনও নোটিশ পেয়েছি কিনা।

ভোররাত। ঘুম চোখে পুরো বিষয়টা তখনও ঠাওহর করে উঠতে পারছি না। ঠিক সেই সময়েই, ভয়ানক একটি বিস্ফোরণের শব্দে কেঁপে উঠল কিয়েভ। বিছানায় বসেই কোনওমতে রিপ্লাই দিলাম, 'আমি আপনাকে পরে কল করব।'

সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। এলাকার সবাই ঘরবাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।

যুদ্ধ শুরু হয়েছে জানতাম। প্রথমেই ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলাম। আমি তখন আমার বাগদত্তাকে তাঁর নিজের শহরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথাও ভেবেছিলাম। ওর বাড়ি কিয়েভ থেকে প্রায় আড়াই ঘণ্টা দূরে। কিন্তু কোনও গাড়ি পাইনি। আমার নিজের গাড়িও বিক্রি করে দিয়েছি। ফলে আপাতত থেকে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নিলাম।

২৫-২৭ ফেব্রুয়ারি

কার্ফু ঘোষণা করা হল। ফলে ঘর থেকে আর বের হইনি। ভাগ্যক্রমে, খাবারদাবার আগেই অনেকটা এনে রেখেছিলাম। আক্রমণের শব্দ হত নির্দিষ্ট নির্দিষ্ট সময়ে — রাত ১-২টো থেকে ভোর ৫-৬টা পর্যন্ত। তখনই শুনতে পেতাম বিস্ফোরণ, গুলির শব্দ, আলোর ঝলকানি এবং উপরে উড়ন্ত বিমানের শব্দ।

আমি যে অ্যাপার্টমেন্টে ছিলাম সেখানে একটি বাঙ্কারের মতো বেসমেন্ট ছিল। একবার সেখানে গিয়েছিলাম, ২৫ তারিখ সকালে। এরপর আমরা বেশিরভাগ সময়ে ফ্ল্যাটেই থাকতাম। সাইরেন বাজলে তখন করিডোরে বা মাঝে মাঝে বাথরুমে বসে থাকতাম। ২৫ এবং ২৬ তারিখে সারাদিন প্রায় ৮-৯ বার সাইরেন বেজেছিল।

ভারতীয় দূতাবাস আমাদের সরিয়ে নিয়ে যেতে পারত। তবে একটা সমস্যা ছিল। আমার বাগদত্তা ইউক্রেনীয়। ফলে অন্য রাস্তা বাছতে হল। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করলাম। লম্বা রাস্তা নিজেদের ভরসাতেই পাড়ি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।

২৮ ফেব্রুয়ারি

কার্ফু তুলে নেওয়া হল। সেদিন সকালেই আমরা পশ্চিমে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। কোন বর্ডার, কোথা থেকে পারাপার হবে সে বিষয়ে আমাদের কোনও পরিকল্পনা ছিল না। আমরা শুধু একটাই জিনিস জানতাম। আমাদের যে করে হোক, প্রথমে লভিভে যেতে হবে। লভিভে আমি আগেও গিয়েছি। ওখানে আমি দাবার টুর্নামেন্টের জন্য অনেকবার গিয়েছিলাম। তাই রাস্তাও চেনা। ওখানে বন্ধুবান্ধবও ছিল। তবে এই পরিস্থিতিতে সেই চেনা রাস্তায় যাওয়াটাও ছিল দুঃস্বপ্নের মতো।

ছবি : টুইটার
ছবি : টুইটার (Twitter)

সকালে প্রথমে কিয়েভ স্টেশনে গেলাম। ট্রেনে ওঠার জন্য প্রচুর ভিড় ছিল। বয়স্ক, মহিলা এবং শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল। আমি ভিক্টোরিয়াকে বললাম, 'তুমি চলে যাও। আমি পরে ঠিক চলে আসব।' কিন্তু ও আমাকে ছেড়ে যেতে চাইল না। বলল দেরি হোক, একসঙ্গেই যাব। তখনকার মতো আমরা বাড়ি ফিরে এলাম। আমার বাড়ি স্টেশন থেকে খুব বেশি দূরে নয়। আমরা আবার সন্ধ্যায় রওনা দিলাম। সৌভাগ্যবশত, একটি ট্রেন পেয়ে গেলাম। বিকেল ৫টায় ট্রেন ছাড়ল।

১-২ মার্চ

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ আমরা লভিভে পৌঁছলাম। ওখানে কোনও গুলি বা বিস্ফোরণের শব্দ ছিল না। হোটেল রুমে কিছুটা বিশ্রামের পর আমি বাইরে গিয়ে কয়েকজন স্থানীয় লোকের সঙ্গে কথা বললাম। দেশ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিভিন্ন উপায় ছিল। কিন্তু আমায় প্রধান রুটগুলি না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হল। কারণ সেগুলি তখন জ্যামে ঠাসা ছিল। কোথায় ভিড় কম তা দেখার জন্য আমি গুগল ম্যাপ চেক করলাম। আমার কাছে দুটি মাত্র অপশন ছিল- স্লোভাকিয়া এবং পোল্যান্ড রুট। পোল্যান্ডের রুটটাই কাছাকাছি ছিল। পোল্যান্ডের সীমান্তটি Lviv থেকে দুই ঘণ্টার পথ ছিল, প্রায় ৭০ কিমি।

কার্ফু প্রতি রাতে ১০ টায় শুরু হত। এক চেনা ট্যাক্সিচালক ছিলেন। তাঁর গাড়িতেই রাত ৮টায় আমরা লভিভ ছাড়ি।

সেখান থেকে আমরা পোলিশ সীমান্তের নিকটতম গ্রাম উহরিনিবে পৌঁছলাম। সেখানে ভিড় অনেকটাই কম ছিল। জনা ২০ লোক ছিলেন। বেশিরভাগই ইউক্রেনীয়। পায়ে হেঁটে সীমান্ত পার হতে আমরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিলাম। পোলিশ কর্তৃপক্ষ আমার পাসপোর্ট এবং অন্যান্য কাগজপত্র পরীক্ষা করল। রাত ১১টা ২০-র দিকে সীমান্তে পৌঁছালাম। ১১টা ৩৫ মিনিট নাগাদ পোল্যান্ডে ঢুকে গেলাম। সীমান্ত থেকে আমরা চেলম (প্রায় ২৫ কিমি) নামের একটি ছোটো শহরে চলে গেলাম। সেখান থেকে ওয়ারশ (প্রায় ২৫০ কিলোমিটার) যাওয়ার জন্য একটা ট্রেন নিলাম। পুরোটাই পোলিশ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা করে দিয়েছিল। ২ তারিখ আমরা ওয়ারশ পৌঁছলাম।

৩-৭ মার্চ

ওয়ারশ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ভারতের বিমান ধরা যেত। কিন্তু ভিক্টোরিয়ার ইন্ডিয়ান ভিসা আসেনি তখনও। তারই অপেক্ষা করছিলাম। আমাদের সঙ্গে আমাদের পোষা বিড়ালটাও ছিল। ওয়ারশে ভারতীয় দূতাবাসে গেলাম। কিন্তু আধিকারিকরা সবাই সীমান্তে উদ্ধারের অভিযানে ব্যস্ত। ৪ তারিখে অনলাইনে ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম। ৫ তারিখ রাতেই ভিসা পেয়ে গেলাম। পরের দু'দিন কাগজপত্র সব গুছিয়ে নিলাম। ওয়ারশ ভিক্টোরিয়ার খুড়তুতো বোনের বাড়ি। তার কাছে পোষা বিড়ালটা রেখে এলাম।

৮-৯ মার্চ

আমরা ৮ তারিখে ওয়ারশ থেকে বিমানে চড়লাম। জুরিখ হয়ে নয়াদিল্লি পৌঁছলাম। তারপর সোজা ভুবনেশ্বর। অবশেষে বাড়ি পৌঁছলাম। বাড়ি ঢুকে যে কী শান্তি, বলে বোঝাতে পারব না। আমার বাবা-মা এবং পরিবারের সকলে মনে হয় আরও বেশি শান্তি পেলেন। আমার চেয়েও ওঁরা বেশি চিন্তিত ছিলেন।

এবার হয় তো আমাদের ভারতেই নতুন করে জীবনটা শুরু করতে হবে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি থেকে ফিরে আসতে পেরে আমি ধন্য।

Haryana and JNK Election Haryana and JNK Election
পরবর্তী খবর

Latest News

মেষ-বৃষ-মিথুন-কর্কট রাশির কেমন কাটবে মহাষ্টমী? জানুন রাশিফল এবছর কত ক্ষণ থাকছে অষ্টমী তিথি? মহাষ্টমীর অঞ্জলি হবে কখন? জেনে নিন সঠিক সময় সপ্তমীর দুপুরে পথ দুর্ঘটনা, মৃত্যু শম্ভুনাথ পন্ডিতের চিকিৎসকের স্ত্রী-মেয়ের মহাসপ্তমীতে ফুলপাতি উৎসব শিলিগুড়িতে, দেখুন দারুণ সব মুহূর্ত 'ক্যাপ্টেন, এটা আপনার সিংহাসন...!' তরুণী পাইলটকে কেন একথা বলেছিলেন রতন টাটা? রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বিদায় রতন টাটাকে, শেষকৃত্যে হাজির অমিত শাহ-একনাথ শিন্ডেরা আসিয়ান দেশগুলির সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও দৃঢ় করতে মোদীর ১০ দাওয়াই 'সবসময় সবাইকে সাহায্য করেছেন', লাইভ শো-তে রতন টাটাকে শ্রদ্ধার্ঘ্য দিলজিতের দিল্লির বায়ুদূষণ ঠেকাতে ‘‌ক্লাউড সিডিং’‌ প্রয়োজন, দিল্লির সরকারের চিঠি কেন্দ্রকে ইস্টবেঙ্গল-মহমেডানের পয়েন্ট কাটাকাটি! অথচ বৈঠকে ডাকা হল DHFCকে! আজব কাণ্ড IFAতে…

Copyright © 2024 HT Digital Streams Limited. All RightsReserved.