রেজাউল এইচ লস্কর
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি পদত্যাগের পর ভারতে চলে এসেছিলেন, তাঁকে হিন্ডন বিমানঘাঁটি থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। কারণ তাঁর লন্ডনযাত্রা কার্যত অনিশ্চয়তার মধ্য়ে রয়েছে।
৭৬ বছর বয়সি শেখ হাসিনা সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে করে নয়াদিল্লির কাছে হিন্ডন বিমানঘাঁটিতে অবতরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল এবং ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তারা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিকজন জানিয়েছেন, হিন্ডন বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে শেখ হাসিনাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নিরাপত্তার কারণে বিস্তারিত জানাতে চাননি তাঁরা।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সংসদে জানিয়েছেন, ভারতে আসার জন্য সোমবারই অনুমতি চেয়েছিলেন শেখ হাসিনা। লন্ডনে তাঁর আত্মীয়স্বজন রয়েছে এমন দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তিনি আরও কিছুদিন ভারতে থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে রয়েছেন তার বোন শেখ রেহানা, যার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যে লেবার পার্টির নেত্রী। সিদ্দিক সম্প্রতি সংসদ সদস্য হিসেবে পুনঃনির্বাচিত হন এবং ট্রেজারি ও নগরমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ পান।
ওই সূত্রে জানা গেছে, গত মাস থেকে শুরু হওয়া হিংসা ও বিক্ষোভের সম্ভাব্য তদন্তের ক্ষেত্রে আইনি সুরক্ষার মতো ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু নিশ্চয়তা চেয়েছেন শেখ হাসিনা।
তবে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি সোমবার বাংলাদেশে 'নজিরবিহীন মাত্রার হিংসা ও প্রাণহানির' বিষয়ে জাতিসংঘের নেতৃত্বে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, গত দুই সপ্তাহের ঘটনায় জাতিসংঘের নেতৃত্বে একটি পূর্ণাঙ্গ ও স্বাধীন তদন্ত বাংলাদেশের জনগণের প্রাপ্য।
তবে যুক্তরাজ্যের অভিবাসন বিধিমালায় কোনো ব্যক্তিকে আশ্রয় বা সাময়িক আশ্রয়ের জন্য ব্রিটেনে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার কোনো বিধান নেই। এটা বোঝা যায় যে ব্রিটিশ পক্ষ বিশ্বাস করে যে আন্তর্জাতিক সুরক্ষা প্রয়োজন এমন কোনও ব্যক্তির প্রথম দেশে আশ্রয় দাবি করা উচিত কারণ এটি সুরক্ষার দ্রুততম পথ হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব ঘটনা শেখ হাসিনার যুক্তরাজ্য সফরের পরিকল্পনা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে। তারা বলেন, হাসিনার টিম অন্য দেশে আশ্রয় চাওয়ার বিকল্প রাস্তা খতিয়ে দেখছে। যেসব দেশের দিকে নজর দেওয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ফিনল্যান্ড, কারণ সেখানে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয়স্বজনও রয়েছেন।
এছাড়া রাশিয়া, বেলারুশ বা পশ্চিম এশিয়ার কোনো দেশের কথা ভাবা হচ্ছে।
সোমবার সকালে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী জানতে চান, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সরকারের কাছে কোনো তথ্য আছে কি না। জয়শঙ্কর বলেন, ভারতের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নিয়ে কথা হয়েছে, তবে এই মুহূর্তে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না।