বড়দের যুদ্ধের খেসারত দিতে হচ্ছে শিশুদের। বিশ্বের প্রায় সর্বত্রই, যেখানে যেখানে সংঘাতের পরিস্থিতি বর্তমান রয়েছে, সেই সমস্ত জায়গায় এই ছবিটা ক্রমশ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠছে। রাষ্ট্রসঙ্ঘের শাখা সংগঠন ইউনিসেফ-এর পেশ করা রিপোর্টেই সামনে এসেছে এই সংক্রান্ত একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য।
সেই তথ্য অনুসারে, ইদানীংকালের মধ্যে ২০২৪ সালটি বিশ্বের শিশুদের জন্য সবথেকে জঘন্য একটি বছর হিসাবে চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে। কেন বলা হচ্ছে একথা? বলা হচ্ছে, কারণ - এবছর বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ এলাকাগুলিতে মোট যত পরিমাণ শিশু তাদের পড়াশোনা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে, সেই সংখ্যা পূর্বের সমস্ত রেকর্ড ছাপিয়ে গিয়েছে। তথ্য বলছে, সংখ্য়াটা ৫২ মিলিয়নের (৫ কোটি ২০ লক্ষ) থেকেও বেশি!
এখানেই শেষ নয়। সংঘর্ষ ও যুদ্ধে খেসারত প্রাণ দিয়ে দিতে হয়েছে অসংখ্য শিশুকে। বড়দের যুদ্ধের মাঝে পড়ে নির্মম ও নৃশংস মৃত্যু হয়েছে তাদের। বহু শিশু আজ পর্যন্ত তাদের প্রয়োজনীয় টিকাগুলি পায়নি। এমনকী, খাবারের অভাবে তাদের শরীরে বাসা বেঁধেছে অপুষ্টিজনিত নানা অসুখ।
ইউনিসেফ-এর আশঙ্কা, আগামী দিনে শিশুদের এই অধিকার লঙ্ঘিত হওয়ার ঘটনাগুলি আরও বাড়বে। কারণ, তাদের হিসাব অনুসারে, এই মুহূর্তে বিশ্বের নানা প্রান্তে যে সংঘর্ষগুলি চলছে, তার মধ্য়েই থাকতে বাধ্য হচ্ছে প্রায় ৪৭৩ মিলিয়ন (৪৭ কোটি ৩০ লক্ষ) শিশু। এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রতি ছ'টি শিশুর মধ্যে একটির বেশি শিশু এইসব সংঘাতপূর্ণ এলাকার বাসিন্দা।
এই প্রসঙ্গে ইউসেফ-এর এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর ক্যাথরিন রাসেল বলেন, 'কোনও যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় শিশুর বড় হওয়ার অর্থ হল - তারা স্কুলে যেতে পারবে না, তারা পুষ্টিকর খাবার খেতে পাবে না, তারা বাধ্য হবে তাদের বাড়ির বাইরে থাকতে। এমন শিশুদের সঙ্গে বারবার সেইসব শিশুদের তুলনা টানা হবে, যারা কোনও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে থেকে বড় হয়ে উঠছে। এটা কোনও অবস্থাতেই 'নিউ নরম্য়াল' হতে পারে না। বিশ্বব্যাপী বেপরোয়া যুদ্ধ চলবে। আর একটা গোটা প্রজন্ম তার খেসারত দেবে, সেই সংঘাতের 'কোল্যাটারাল ড্যামেজ' হিসাবে পরিগণিত হবে, এটা আমরা কিছুতেই হতে দিতে পারি না।'
এই প্রসঙ্গেই ইউনিসেফ-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৪ সালে অন্তত ৫২ মিলিয়ন শিশু তাদের স্কুল ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বা হবে। এক্ষেত্রে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজা এবং সুদানের শিশুরা। তারা একবছরেরও বেশি সময় ধরে স্কুলে যেতে পারেনি।
এখানেই শেষ নয়। যুদ্ধের কারণেই স্কুলে যেতে পারছে না ইউক্রেন, ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো এবং সিরিয়ার লক্ষ লক্ষ শিশু ও কিশোর। কারণ, সেখানে যুদ্ধবাজরা স্কুলগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে। সমস্ত পরিকাঠামো নষ্ট করে দিয়েছে।