আজ উত্তরাখণ্ড কার্যকর হতে চলেছে ইউনিফর্ম সিভিল কোড বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। স্বাধীন ভারতে এই প্রথম কোনও রাজ্যে এই ধরনের আইন কার্যকর হবে আজ। এই প্রসঙ্গে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি বলেন, 'আইন বাস্তবায়নের জন্য বিধিগুলি অনুমোদন পেয়ে গিয়েছে। এই নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আইন বাস্তবায়নের সমস্ত প্রস্তুতি সরকার সম্পন্ন করেছে।' আইনটির পক্ষে যুক্তি দেওয়া হয়েছে যে এটি 'সমাজে অভিন্নতা আনবে এবং সমস্ত নাগরিকের জন্য সমান অধিকার ও দায়িত্ব নিশ্চিত করবে'। (আরও পড়ুন: 'কয়েকটা ড্রোন ছেড়ে দিলেই...', বাংলাদেশকে 'মশা-মাছি' বলে আক্রমণ শুভেন্দুর)
আরও পড়ুন: সনাতন হল ভারতের 'জাতীয় ধর্ম', ঐক্যের বার্তা দিতে মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের
বার্তাসংস্থা পিটিআইকে এই নিয়ে পুষ্কর সিং ধামি বলেছেন, 'দেশকে একটি উন্নত, সংগঠিত, সম্প্রীতিপূর্ণ এবং স্বনির্ভর জাতি হিসাবে গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী যে মহান যজ্ঞ শুরু করছেন তাতে ইউসিসি আমাদের রাজ্যের দেওয়া একটি আহুতি মাত্র।' উল্লেখ্য, ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে উত্তরাখণ্ডে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বিজেপি। সেই নির্বাচনে জিতে পদ্ম শিবির টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরেছিল উত্তরাখণ্ডে। ২০০০ সালে উত্তরাখণ্ড রাজ্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই প্রথম কোনও দল টানা দ্বিতীয়বার গদি দখল করে সেখানে। মুখ্যমন্ত্রী ধামির মতে, ইউসিসি পাস করার জন্য দল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিল বলেই এই ঐতিহাসিক ফলাফল হয়েছিল নির্বাচনে। (আরও পড়ুন: বন্ধ নিজেদের অনুদান, তবুও ট্রাম্পকে 'ধন্যবাদ' জানাল বাংলাদেশ, ইউনুসের সরকার বলল…)
অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর
বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভের পরে ২০২২ সালের মার্চ মাসে মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে ইউনিফর্ম সিভিল কোড সম্পর্কে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেছিল। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জনা প্রকাশ দেশাইয়ের নেতৃত্বে ২০২২ সালের ২৭ মে ইউসিসির খসড়া তৈরির জন্য এই প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। দেশাই কমিটি রাজ্যের বিভিন্ন অংশে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেড় বছর ধরে আলোচনার পরে চার খণ্ডে একটি বিস্তৃত খসড়া প্রস্তুত করে এবং তা সরকারের কাছে জমা দেয়। ২০২৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সেই খসড়া রাজ্যের কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং এর কয়েকদিন পরেই উত্তরাখণ্ড বিধানসভায় ইউসিসি বিল পাস হয়। প্রাথমিক প্রস্তাবের প্রায় দু'বছর পর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু তাতে সম্মতি দেন।
এদিকে তারপর প্রাক্তন মুখ্যসচিব শত্রুঘ্ন সিংয়ের নেতৃত্বে আরও একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি কাজ শুরু করে এই নিয়ে। আইনটি বাস্তবায়নের জন্য বিধি-বিধান প্রণয়নের জন্য এই কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সিনহা কমিটি গত বছরের শেষের দিকে রাজ্য সরকারের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। রাজ্য মন্ত্রিসভা সম্প্রতি সেই বিধানগুলিতে অনুমোদন দিয়েছে এবং মুখ্যমন্ত্রীকে এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি তারিখ স্থির করার অনুমতি দিয়েছে। এই আবহে দেশের ৭৬ তম প্রজাতন্ত্র দিবস উদযাপনের একদিন পরেই এই আইন কার্যকর করা হবে বলে ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ধামি।
অভিন্ন দেওয়নি বিধিতে কী কী বদলাবে?
উত্তরাখণ্ডের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আইন বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, লিভ-ইন সম্পর্ক এবং সম্পর্কিত বিষয়গুলি পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করবে। এই আইন পুরুষ ও মহিলাদের জন্য সমান বিবাহযোগ্য বয়স, বিবাহবিচ্ছেদের ভিত্তি এবং সমস্ত ধর্মের পদ্ধতি নির্ধারণ করবে এবং বহুবিবাহ ও 'হালালা' নিষিদ্ধ করবে। নয়া আইনে সমস্ত বিবাহ এবং লিভ-ইন সম্পর্কের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক হবে। নয়া আইনে ধর্ম নির্বিশেষে প্রত্যের নারীর অধিকার পুরুষের সমান হবে। এবার থেকে ধর্মীয় বিধানের জোরে নারীর অধিকার খর্ব করা যাবে না। এছাড়া লিভ-ইন সম্পর্কে থাকাকালে সম্তান হলে সেই সন্তান বাবা ও মায়ের উত্তরাধিকার লাভ করবে। অপরদিকে নয়া আইনে বলা হয়েছে, বলা হয়েছে নারী ও পুরুষ একাধিক বিয়ে এবং একাধিক সঙ্গীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারবে না। এদিকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি আদিবাসীদের ক্ষেত্রে বলবৎ হবে না। জন্ম, বিয়ে, উত্তরাধিকার, নারীর অধিকারের মতো ক্ষেত্রে আদিবাসী সমাজের নিজস্ব বিধান চালু আছে। সেগুলি বহাল থাকবে বলে জানানো হয়েছে।