ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গভাইয়ের দিকে জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা করা ব্যক্তির বিরুদ্ধে তফসিলি জাতি ও তপশিলি উপজাতি (অত্যাচার প্রতিরোধ) আইনে মামলা দায়ের করার দাবি জানালেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালে। তিনি দাবি করেন, দলিত সম্প্রদায়ের জাস্টিস গভাই এত উচ্চ পদে পৌঁছেছেন বলে কিছু উচ্চবর্ণের মানুষ তা মেনে নিতে পারছেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে বিশিষ্ট দলিত নেতা তথা সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী আঠাওয়ালে বলেন, এই ঘটনা নিন্দনীয়।
আঠাওয়ালে বলেন, 'এই প্রথম প্রধান বিচারপতিকে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হয়েছে। ভূষণ গভাই দলিত সম্প্রদায়ের অন্তর্গত এবং তাঁর যোগ্যতার ভিত্তিতে এই পদটি তিনি অর্জন করেছেন। তাই উচ্চবর্ণের কিছু সদস্য এই সত্যটি হজম করতে পারছেন না। আমি দাবি করছি যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তপশিলি জাতি ও উপজাতি আইনে মামলা দায়ের করা হোক। কারণ বিচারপতি গভাই দলিত হওয়ায় তাঁকে আক্রমণ করার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর আগে কোনও প্রধান বিচারপতির ওপর হামলা হয়নি।'
এদিকে প্রধান বিচারপতি বিআর গভাইয়ের দিকে জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা করা আইনজীবী রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, সর্বোচ্চ আদালতে তাঁর প্র্যাকটিসের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনও তাঁর সাময়িক সদস্যপদ বাতিল করেছে। এর আগে তাঁর বিরুদ্ধে সাসপেনশন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এর আগে শোনা গিয়েছিল যে কিশোরের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অবমাননার মামলা বিবেচনা করা হচ্ছে। এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে চিঠিও পাঠানো হয়েছে। তবে ঘটনার দিন সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে জিজ্ঞাসাবাদের পর দিল্লি পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
বেঙ্গালুরুতে রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এর আগে অল ইন্ডিয়া লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ভক্তভাচালার অভিযোগের ভিত্তিতে রাকেশ কিশোরের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (বিএনএস) ধারা নং ১৩২ (সরকারি কর্মচারীকে তাঁর দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য আক্রমণ বা শক্তি প্রদর্শন) এবং ১৩৩ (গুরুতর উস্কানি ছাড়াই কোনও ব্যক্তিকে অপমান করার উদ্দেশ্যে আক্রমণ বা শক্তি প্রদর্শন)-এর অধীনে এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল।
উল্লেখ্য, গত ৬ অক্টোবর আদালত চলাকালীন এক আইনজীবী বিচারপতি বিআর গভাইয়ের দিকে জুতো ছুড়ে মারার চেষ্টা করেছিলেন। সেই আইনজীবীর অভিযোগ ছিল, বিচারপতি গভাই সনাতন হিন্দু ধর্মের অবমাননা করেছেন। আইনজীবীর ছুড়ে মারা জুতোটি অবশ্য বিচারপতির গায়ে লাগেনি। পরে প্রবীণ ওই আইনজীবীকে আদালতকক্ষ থেকে বার করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেই আইনজীবীকে চিৎকার করে বলেতে শোনা যায়, 'আমরা সনাতনের অপমান সহ্য করব না।' প্রধান বিচারপতির পাশাপাশি ওই বেঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি কে বিনোদ চন্দ্রন। তবে প্রধান বিচারপতি বিআর গভাই এই ঘটনায় বিচলিত হননি। পাশাপাশি আদালতের কাউকে এর জন্য বিভ্রান্ত হতেও বারণ করেছিলেন তিনি। প্রধান বিচারপতি বিআর গভাইয়ের সঙ্গে কথা বলেন নরেন্দ্র মোদী। পরে এই ঘটনার নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী এক্স বার্তায় লিখেছিলেন, সমস্ত ভারতবাসী এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ।