বেশ কিছুদিন রোগভোগের পর মৃত্যু হল কেন্দ্রীয় খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের। এছাড়াও কনজিউমার অ্যাফায়ার্স দফতরের মন্ত্রী ছিলেন তিনি। তাঁর ছেলে চিরাগ পাসওয়ান টুইটারে এই কথা জানান। লোকজনশক্তি পার্টির নেতা রামবিলাস পাসওয়ানের মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৭৪। বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। কয়েক দিন আগে হয়েছিল হার্ট অপারেশন। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের উন্নয়নে তাঁর কাজের জন্য ভারতীয় রাজনীতিতে চিরস্মরণীয় থাকবেন তিনি।
টুইটারে চিরাগ লেখেন যে তুমি আর আমাদের সঙ্গে নেই, কিন্তু আমি জানি তুমি সর্বদা আমার পাশেই থাকবে। তোমাকে মিস করছি, লেখেন ছেলে চিরাগ।
বিহারে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির অন্যতম বড় নেতা ছিলেন রামবিলাস পাসওয়ান। আটবার লোকসভায় গিয়েছেন তিনি। বর্তমানে ছিলেন রাজ্যসভার সাংসদ। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব।
১৯৬৯ সালে মাত্র ২৩ বছর বয়সে সংযুক্ত সোশ্যালিস্ট পার্টির হয়ে বিহার বিধানসভায় প্রবেশ করেন তিনি। এরপর ১৯৭৪ সালে নয়া পার্টি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যুক্ত হন। হাজিপুর থেকে ১৯৭৭ সাল থেকে লোকসভায় সাংসদ ছিলেন তিনি। জিতেছেন ১৯৮০, ১৯৮৯, ১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯, ২০০৪ ও ২০১৪ সালে।
২০০৯ সালে ভোটে হারার পর ২০১০-২০১৪ রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন তিনি। গত লোকসভা নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেননি। রাজ্যসভায় এনডিএ-র কোটায় গিয়েছিলেন তিনি।
২০০০ সালে লোকজনশক্তি পার্টি গঠন করেন তিনি। ইউপিএ ও এনডিএ, দুই গোষ্ঠীতেই বিভিন্ন সময় ছিল এলজেপি। ইউপিএ আমলে তিনি কয়লা ও কেমিক্যাল মন্ত্রী ছিলেন ২০০৪ সালে।
রাজ নারায়ণ ও জয়প্রকাশ নারায়ণের সমর্থক, জরুরি অবস্থার সময় প্রতিবাদের মাধ্যমে প্রচারের পাদপ্রদীপে আসেন রামবিলাস পাসওয়ান। সেখান থেকেই রাজনৈতিক উত্থান শুরু। প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংয়ের আমলে। পেয়েছিলেন শ্রমমন্ত্রকের দায়িত্ব। এরপর ১৯৯৬ সালে পান রেলমন্ত্রকের দায়িত্ব।
বাজপেয়ী সরকারেও তিনি ছিলেন মন্ত্রী। প্রথমে তথ্যসম্প্রচার ও পরে কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বভার সামলান রামবিলাস পাসওয়ান। সব মিলিয়ে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কাজ করেছিলেন এই দলিত নেতা। কংগ্রেস জোট, বিজেপি জোট ও তৃতীয় ফ্রন্ট-সব সরকারেই তিনি ছিলেন মন্ত্রী। ২০১৪ সাল থেকে এনডিএ-র সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর খাদ্য ও গণবণ্টন মন্ত্রকের দায়িত্ব যথেষ্ট পারদর্শীতার সঙ্গে করেছিলেন তিনি।
শেষের দিকে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন তিনি। সেই সময় এনডিএ জোট ভেঙে বেরিয়ে এসে পৃথক নির্বাচন লড়ার সিদ্ধান্ত নেন চিরাগ পাসওয়ান। পিতার মতোই রাজনৈতিক চড়াই উতরাই পেরিয়ে চিরাগ সাফল্য পান কিনা, সেটাই দেখার।