ওড়িশার মাওবাদী অধ্যুষিত মালকানগিরি জেলায় অজানা জলবাহিত রোগের শিকার হচ্ছেন স্থানীয় জনজাতির সদস্যরা। গত তিন মাসে এর জেরে মারা গিয়েছেন ১০ জন। তিন মাস আগেও অজানা রোগে এই জেলায় মৃত্যু হয় ১২ জন বাসিন্দার।
মালকানগিরির জেলাশাসক মনীষ আগরওয়াল জানিয়েছেন, জেলার মাথিলি ব্লকের জনজাতিদের গ্রাম সোদিগুড়ায় গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেছেন মেডিক্যাল টিমের সদস্যরা। এ ছাড়া, ওই অঞ্চলে পানীয় জলের নমুনাও জোগাড় করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত অসুখের সঠিক কারণ নির্ণয় করা যায়নি বলে জানান জেলাশাসক।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হল দ্রুত শরীর ফুলে ওঠা। এর পরেই লোপ পায় খাওয়ার ইচ্ছা। ধীরে ধীরে অপুষ্টির কারণে ক্রমাগত দুর্বল হতে থাকে রোগীর শরীর। এর ফলে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।
মালকানগিরির প্রধান মেডিক্যাল অফিসার চিকিৎসক পি কে নন্দ জানিয়েছেন, ১৪ জন গ্রামবাসীকে হাসপাতালে ভরতি রেখে তাঁদের বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁর দাবি, অসুস্থদের মধ্যে কেউ রক্তাল্পতায় ভুগছেন, আবার ম্যালেরিয়াতেও আক্রান্ত হয়েছেন অনেকে। আবার ইউরিয়া মেশানো দিশি মদ পান করার ফলে কয়েক জনের পেট ও পা ফুলে গিয়েছে।
গত জুন মাসেও এই জেলার কেন্দুগুড়া গ্রামের ১৫ জন পা ও পেট ফুলে মারা যান।
পুষ্টি বিশারদ বসন্ত কুমার করের মতে, মালকানগিরির জনজাতিদের মধ্যে অপুষ্টিজনিত কারণে মৃত্যুর হার বেশি। চতুর্থ জাতীয় স্বাস্থ্য সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, ওই অঞ্চলে অপুষ্টির হার ৫১.৮ শতাংশ, যা রাজ্য গড়ের চেয়ে অনেক কম। অসুস্থতা ও অকালমৃত্যু ঠেকাতে প্রয়োজন ভিটামিন ও খনিজযুক্ত পরিমিত আহার। লকডাউনের কারণে সেই খামতি এখন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া ম্যালেরিয়ার নিত্য প্রকোপে জনজাতিগুলির মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও মাত্রাতিরিক্ত হ্রাস পেয়েছে।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে মালকানগিরিতে দুই ধরনের এনসেফ্যালাইটিসে মারা যায় একশোর বেশি শিশু। তারা প্রায় সকলেই অপুষ্টিতে ভুগছিল। ২০১৪ সালের বার্ষিক স্বাস্থ্য সমীক্ষা রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, ১০ জনের মধ্যে ৭টি শিশু অপুষ্টির অভাবে ভোগে।