সোনার খনির সন্ধান পাওয়ার সুবাদে সম্প্রতি সংবাদের শিরোনামে স্থান পেয়েছে উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্র জেলা। জিএসআই-এর হিসবে খনিতে সোনার কল্পিত পরিমাণে যতই কাটছাঁট হোক না কেন, অঞ্চলের অতীতগাথার প্রতি পরতে জড়িয়ে থাকা স্বর্ণালি ইতিহাস তাতে মলিন হয় না।
বহু কাল থেকেই সোনভদ্রে প্রচলিত প্রবাদ ‘একশো মণ সোনা, কোনা-কোনা’। এই প্রবাদের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে সোন পাহাড়ি এবং অগোরি কেল্লার। জেলার চোপন বিকাশ খণ্ডের অন্তর্গত অগোরি গ্রামে জঙ্গলের ভিতরে আছে আদিবাসী রাজা বল শাহের তৈরি জীর্ণ প্রাচীন কেল্লা।
কিংবদন্তী অনুযায়ী, ৭১১ খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চল শাসন করতেন খরওয়ার জনজাতির নৃপতি বল শাহ। তাঁর রাজ্যে হানা দিয়েছিল চন্দেল রাজার বাহিনী। যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাজ্য ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন বল শাহ। বিশ্বস্ত সৈন্যদলের সঙ্গে রানি জুরহিকে নিয়ে গুপ্তপথে কেল্লা ছাড়ার সময় তিনি সঙ্গে নিয়েছিলেন রাজভাণ্ডারের ১০০ মণ (৪,০০০ কিলো) সোনা।
শত্রুর চোখে ধুলো দিয়ে কেল্লা থেকে বেরিয়ে সাত কিমি দূরের রেণু নদীর তীরবর্তী পনারির জঙ্গলে আত্মগোপন করেন হতভাগ্য রাজা বল শাহ। লুঠেরা চান্দেলা সেনাদের নজর এড়াতে সঙ্গে আনা সোনা কয়েক ভাগে লুকিয়ে রাখেন সোন পাহাড়ির একাধিক গুহা ও ফাটলের মধ্যে।
পাহাড়ের কোনায় কোনায় সোনা লুকোনোর এই প্রাচীন কিংবদন্তী থেকেই এই অঞ্চলের নাম হয়ে যায় সোন পাহাড়ি। সেই সঙ্গে চালু হয়ে যায় কালজয়ী প্রবাদও।
আদিবাসী সমাজ সম্পর্কে দীর্ঘ দিনের গবেষণার অভিজ্ঞতা থেকে সমাজকর্মী রামেশ্বর গোন্ডের মতে, পরাজিত আদিবাসী রাজা বল শাহের খোঁজে সোন পাহাড়ির জঙ্গলেও হানা দিয়েছিল চান্দেলা সেনা। কিন্তু ততদিনে গুহায় লুকিয়ে থেকেও হিংস্র শ্বাপদের শিকার হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছিল।
হতভাগ্য রানি জুরহিকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় শত্রুসেনা। পরে জুগ্যাল গ্রামের জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে তাঁকে হত্যা করা হয়। উত্সাহীরা এখনও সেই জঙ্গলে তাঁর স্মৃতিতে তৈরি ‘জুরহি দেবী মন্দির’ দর্শন করতে পারেন।
রামেশ্বর গোন্ডের দাবি, বহু কাল পরে সোন পাহাড়ির গুহা থেকে রাজা বল শাহের তলোয়ার ও কবচ খুঁজে পেয়েছিল খরওয়ার সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। অস্ত্রটি সে ওজনদরে বেচে দিলেও রেখে দিয়েছিল রাজার কবচখানা। বংশ পরম্পরায় আজও নাকি এক খরওয়ার পরিবারে সযত্নে সুরক্ষিত রয়েছে বল শাহের সেই কবচ। এবং এখনও লোকে বিশ্বাস করে, সোন পাহাড়ির গিরি কন্দরের আনাচ-কানাচে লুকোনো রয়েছে রাজার সেই ধনভাণ্ডার।
স্থানীয় সাংবাদিক জগত্ নারায়ণ বিশ্বকর্মা জানিয়েছেন, রাজা বল শাহের সাধের অগোরি কেল্লা এখনও পর্যন্ত চান্দেল রাজবংশের কুক্ষিগত রয়েছে। সেই বংশের বর্তমান উত্তরাধিকারী আভূষণ ব্রহ্ম শাহ সোনভদ্র জেলার রাজপুরে বাস করেন।
গুপ্তধনের লোভে কেল্লার সর্বত্র খুঁড়ে ফেলেও হতাশ হন চান্দেল বংশীয় রাজারা। অনেক খুঁজেও বল শাহের লুকোনো সোনার সন্ধান তাঁরা পাননি
সেই থেকে পরিত্যক্ত হয়ে জঙ্গলের মাঝে পড়ে রয়েছে ভগ্নপ্রায় কেল্লা। ঐতিহাসিক সৌধ সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেনি পুরাতত্ত্ব বিভাগও।