এত দিন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের 'আম্বেদকর-ফ্যাশন' মন্তব্য নিয়ে মূলত কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিই প্রতিবাদ, বিক্ষোভ প্রদর্শন প্রভৃতি করে এসেছে। কিন্তু, এবার প্রতিবাদের আওয়াজ উঠল আমজনতার মধ্য়ে থেকে! উপরন্তু, যে ব্যক্তি এই ঘটনার প্রতিবাদে সোচ্চার হলেন, তিনি একজন সরকারি কর্মী। শাহের মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে নিজের চাকরিতেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি!
সংবাদ সংস্থা পিটিআই সূত্রে যে খবর সামনে এসেছে, তা হল - প্রতিবাদী ওই ব্যক্তি উত্তরপ্রদেশ সরকারের জল কল বিভাগে কর্মরত ছিলেন। তাঁর নাম - রাকেশ কুমার শর্মা। তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগের অধীনে উত্তরপ্রদেশের আগরার তাজগঞ্জ ওয়ার্ডের ৩ নম্বর জোনের কার্যালয়ের ক্লার্ক ছিলেন।
চাকরিতে ইস্তফা দেওয়ার কারণ হিসাবে রাকেশ জানান, অমিত শাহ সংসদে দাঁড়িয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তাতে তিনি স্তম্ভিত। এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এই মন্তব্য তাঁর এত দিনের বিশ্বাসের ভিত 'নড়িয়ে' দিয়েছে। তাই তিনি ইস্তফা দিচ্ছেন।
পিটিআই সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, রাকেশ তাঁর চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে যে পদত্যাগপত্র কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছেন, সেটিতে তারিখ রয়েছে ১৯ ডিসেম্বরের (২০২৪)। সেই চিঠিতে তিনি লিখেছেন, 'আমি আর কাজ করতে চাই না।'
তাঁর পদত্যাগপত্রে রাকেশ লিখেছেন, তিনি গত ৩৮ বছর ধরে চাকরি করছেন। এবং এখনও তাঁর অবসর নেওয়ার কিছুটা সময় বাকি আছে।
অমিত শাহের ওই বিতর্কিত মন্তব্য প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, 'কোনও মানুষকেই তাঁর জাত বা ধর্ম অনুসারে বিচার করা উচিত নয়। বাবাসাহেব ড. ভীমরাও আম্বেদকরকে ভারতরত্ন প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছিল। তাঁর সম্পর্কে যেকোনও অমাননাকর মন্তব্য করার অর্থ হল, একজন জাতীয় নায়ককে অপমান করা।'
রাকেশ আরও মনে করেন, অমিত শাহ কোনও সাধারণ নাগরিক নন। তিনি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এমন একটি পদে থেকে যদি তিনি একজন জাতীয় নায়ক সম্পর্কে এমন অমাননাকর মন্তব্য করেন, তাহলে সেই আচরণ কখনই ভালো বার্তা দিতে পারে না। এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত খারাপ নির্দশন তৈরি করে।
প্রসঙ্গত, সংসদে বক্তব্য় রাখার সময় হিন্দিতে ভাষণ দিতে গিয়ে হঠাৎই আম্বেদকরকে নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে বসেছিলেন অমিত শাহ। তিনি বলেছিলেন, 'আজকাল এটা একটা ফ্যাশন হয়ে গিয়েছে - আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর, আম্বেদকর...! এতবার যদি ভগবানের নাম নিতেন, তাহলে সাত জন্মের জন্য স্বর্গবাস হয়ে যেত!'
যদিও পরে শাহ দাবি করেন, তিনি মোটেও আম্বেদকরকে অপমান করেননি এবং তাঁর ভাষণ কংগ্রেস বিকৃতভাবে পেশ করছে। কিন্তু, সমস্য়া হল - শাহের এই মন্তব্যের ভিডিয়ো ফুটেজ ইতিমধ্য়েই সারা দেশের মানুষ দেখে ফেলেছে। ফলত, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে আড়াল করতে মাঠে নামতে হয় স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। তারপরও অবশ্য বিতর্ক থামেনি।