সম্প্রতি বাংলাদেশের সুনামগঞ্জে সাম্প্রদায়িক হিংসার শিকার হয়েছিলেন হিন্দুরা। এই ঘটনায় এবার চারজনকে গ্রেফতার করল সেই দেশের পুলিশ। হিন্দুদের বাড়ি, মন্দির এবং দোকানে ভাঙচুরের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে এই চারজন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ধৃতদের নাম - আলিম হোসেন (বয়স ১৯ বছর), ইমরান হোসেন (বয়স ৩১ বছর), সুলতান আহমেদ রাজু (বয়স ২০ বছর), শাহজাহান হোসেন (বয়স ২০ বছর)। (আরও পড়ুন: বাংলাদেশে ভোট কবে? বড় পরিকল্পনার কথা ইউনুসের উপদেষ্টার মুখে, মন্তব্য ভারত নিয়েও)
উল্লেখ্য, ফেসবুকে ধর্মীয় অবমাননাকর পোস্ট করার অভিযোগ উঠেছিল সুনামগঞ্জে। এরপরই সেখানে দোয়ারাবাজার উপজেলায় বিভিন্ন হিন্দুদের বাড়িতে হামলা হয়। চলে লুটপাট। এদিকে ধর্মীয় অবমাননার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় মংলারগাও গ্রামের বাসিন্দা আকাশ দাসকে (বয়স ২০ বছর)। রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, আকাশ দাস নাকি অন্য এক ব্যক্তির ফেসবুক পোস্টে গিয়ে ধর্মীয় অবমাননাকর কমেন্ট করেছিলেন। এই আবহে সুনামগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর চড়াও হয় সুযোগ সন্ধানী মৌলবাদীরা।
রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, সুনামগঞ্জের লোকনাথ মন্দিরে ভাঙচুর করা হয়েছে যাতে অন্তত ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জের বাজারে থাকা হিন্দুদের শতাধিক দোকানে ভাঙচুর এবং লুটপাট করা হয়েছে। উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি গুরু দে’র বাড়িতে হামলা চালানো হয়। সেই এলাকার ১০টি হিন্দু বাড়িতে লুটপাট চালানো হয়। মংলাগাঁওয়ের শতাধিক হিন্দু বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। অনেকেই সেখান থেকে বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। এবং ননিগাঁও পূর্ব হাঁটিতেও বহু হিন্দু বাড়িতে লুটপাট চালানো হয় বলে অভিযোগ।
এছাড়াও মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার গাজিটেক গ্রামে হামলায় শ্রীশ্রী কালী মন্দিরটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা যায়। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। এই আবহে সেখানে হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনা আরও বাড়ছে দিনকে দিন। এদিকে চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ ছাড়াও নীলফামারি এবং ঠাকুরগাওঁতেও নাকি হিন্দুরা আক্রান্ত মৌলবাদীদের হাতে। অভিযোগ, এই সব জায়গায় বেছে বেছে হিন্দুদের মারা হচ্ছে। তাদের দোকানে দেদার লুটপাট চলছে। এদিকে অনেক হিন্দুর বাড়িতে নাকি অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনাও ঘটছে।