আমেরিকা ও তালিবানদের মধ্যে শান্তিচুক্তি হওয়ার আগে শুক্রবার মাঝরাত থেকে আফগানিস্তানে সপ্তাহব্যাপী ‘হিংসা হ্রাস পাওয়ার’ (রিডাকশন ইন ভায়োলেন্স) প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে।
এ দিন মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পিও জানিয়েছেন, শান্তি চুক্তির আগে এই পরিস্থিতি বহাল থাকলে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি তালিবানদের সঙ্গে শান্তি চুক্তি পাকা করবে ওয়াশিংটন। এই চুক্তির জেরে ভবিষ্যতে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার প্রক্রিয়া শুরু করবে আমেরিকা।
পম্পিওর বিবৃতির পরেই তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুদজাহিদ এই উদ্যোগের কথা স্বীকার করে জানান, শান্তিচুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে চলেছেন দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় প্রতিনিধিরা। শুধু তাই নয়, চুক্তি সই হওয়ার পরে আফগানিস্তানের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকে বসবে বলেও জানিয়েছেন তালিবান মুখপাত্র।
২০০১ সালে মার্কিন সেনাবাহিনী আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালিবানদের গদিচ্যুত করার পরে এ পর্যন্ত কাবুল সরকারের সঙ্গে কোনও আলোচনায় অংশগ্রহণে রাজি হয়নি সশস্ত্র গোষ্ঠী। তাদের মতে, আফগান সরকার ছিল ‘আমেরিকার হাতের পুতুল’।
এর আগে আফগানিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার মুখপাত্র জাভিদ ফয়জল জানিয়েছিলেন, আগামী শনিবার থেকে রিডাকশন ইন ভায়োলেন্স প্রক্রিয়া চালু হবে। যদিও এই পর্বে আইএসআইএল-সহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে তাদের সামরিক পদক্ষেপ বহাল রাখবে আফগান বাহিনী। পাশাপাশি, তালিবান-আমেরিকা বোঝাপড়া মাঝপথে ভেস্তে গেলেও প্রয়োজনে প্রত্যাঘাত হানতে প্রস্তুত থাকবে বাহিনী।
শান্তিচুক্তি সম্পাদনের আগে সংঘর্ষ বিরতি পালনের বিষয়ে এর আগে সুদীর্ঘ দর কষাকষির পালা চলে দুই পক্ষের মধ্যে। মনে করা হচ্ছে, শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পরে আফগানিস্তান থেকে সেনা সরাবার প্রক্রিয়া শুরু করবে আমেরিকা। সেই সঙ্গে, অন্যান্য দেশে আঘাত হানার জন্য আফগানিস্তানকে তাদের সেনাঘাঁটি বানানোর প্রচেষ্টা হবে না বলেও চুক্তি অনুযায়ী অঙ্গীকার করতে হবে মার্কিন প্রশাসনকে।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে আমেরিকান সেনার সঙ্গে নিয়মিত সংঘর্ষ বন্ধ করার উদ্দেসে তালিবানদের সঙ্গে শান্তিচুক্তি সাক্ষরে ২০১৮ সাল থেকে চাপ দেয় ডোনাল্ড ট্রাম্প সরকার।
তবে আফগান রাজনৈতিক বিশ্লেষক হারুন মির মনে করেন, শান্তিচুক্তির প্রস্তাব তাত্পর্যপূর্ণ হলেও আসল চ্যালেঞ্জ দেখা দেবে আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রেক্ষিত নিয়ে দেশের বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সুষ্ঠু আলোচনার আবহ তৈরি করা। তাঁর মতে, কোনও রকম আপসে পৌঁছনোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে দেশের বড় রাজনৈতিক দল ও আঞ্চলিক উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বোঝাপড়া তৈরি এবং সেই সঙ্গে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা।