দ্বিতীয়বারের মতো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়েই সেই দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের অধিকার বাতিল করেছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রম্পের এই নির্বাহী নির্দেশিকার বিরুদ্ধে একযোগে ২২টি মার্কিন প্রদেশ মামলা করেছিল। এরই মাঝে ট্রাম্পের এই নির্বাহী আদেশের ওপর সাময়িক স্থগিতাদেশ দিল আদালত। মার্কিন মুলুকের একজন জেলা জজ বিচারক জন কফেন এই নির্দেশিকা দিয়েছেন। ওয়াশিংটন প্রদেশের আদালতে ট্রাম্পের এই নির্বাহী অর্ডারের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ওয়াশিংটন, ওরেগন, ইলিনয় এবং অ্যারিজোনা প্রদেশগুলি। উল্লেখ্য, জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব বাতিলের পরই ডেমোক্র্যাট শাসিত রাজ্যগুলি দাবি করেছিল, এটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীর পরিপন্থী। এছাড়া এই সংক্রান্ত ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্ট আগেও একাধিক রায় দিয়েছে যাতে এটা প্রতিষ্ঠিত যে জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব পাওয়া একটা শিশুর অধিকার, তা তার বাবা-মায়ের অভিবাসন স্ট্যাটাস যাই থাকুক না কেন। এই আবহে সিয়াটেলের বিচারক ট্রাম্পের নির্বাহী অর্ডারকে 'অসাংবিধানিক' আখ্যা দেন।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হয়ে প্রথম দিনই কার্যত ঝড় তোলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। একের পর এক নির্বাহী অর্ডারে স্বাক্ষর করেন ট্রাম্প। এর মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অর্ডারটি ছিল নাগরিকত্ব সংক্রান্ত। হোয়াইট হাউজের তরফ থেকে বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়ে দেওয়া হয়, এবার থেকে আর মার্কিন মুলুকে জন্মগত ভাবে নাগরিকত্ব পাওয়ার অধিকার থাকবে না। উল্লেখ্য, বিগত প্রায় ১৫০ বছর ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূখণ্ডে জন্ম নেওয়া শিশুরা 'জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব' পেয়ে আসছেন। তবে সেই অধিকারকে বাতিল করে নির্বাহী নির্দেশিকায় সই করেন ট্রাম্প। এই নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল ২০২৫ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে।
ট্রাম্পের নির্দেশ অনুযায়ী, মার্কিন মুলুকে যদি অবৈধ অভিবাসীর সন্তান জন্ম নেয়, তাহলে সেই শিশুরা আর মার্কিন নাগরিক হবেন না। এদিকে জন্ম নেওয়া শিশুর মা বাবা যদি বৈধ ভাবেই আমেরিকায় গিয়ে থাকেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে কোনও একজন সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নন, তাহলেও সেই শিশু মার্কিন নাগরিকত্ব পাবে না। এছাড়া কেউ যদি স্টুডেন্ট ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা বা টুরিস্ট ভিসায় আমেরিকায় গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন, তাহলেও সেই শিশু আর মার্কিন নাগরিক হবে না। এদিকে নয়া নিয়মে যে সব ভারতীদের সন্তান ১০০+ গ্রিন কার্ড ওয়েটিং লিস্টে আছে, তারা মার্কিন নাগরিক হতে পারবে না।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আমেরিকায় মেক্সিকান বংশোদ্ভূতরা সর্বোচ্চ সংখ্যায় নাগরিকত্ব পেয়েছেন। আর এখন এই তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূতরা। গত ২০২২ সালে আমেরিকায় ৬৫ হাজার ৯৬০ জন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। আর ২০২৩ সালের হিসেবে ভরতে জন্ম নেওয়া মোট ২ কোটি ৮ লাখ ৩১ হাজার ৩৩০ জন মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছেন এখনও পর্যন্ত। আর মেক্সিকোতে জন্ম নেওয়া ১৯ কোটির বেশি মানুষ আজও পর্যন্ত মার্কিন নাগরিকত্ব পেয়েছিলেন। আর এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে চিন। সেই দেশে জন্ম নেওয়া ২ কোটি ২ লাখ মানুষ বিগত দিনে মার্কিন নাগরিত্ব পেয়েছিলেন। এদিকে রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকায় বসবাসকারী ভারতীয় বংশোদ্ভূত বিদেশি নাগরিকদের প্রায় ৪২ শতাংশ বর্তমানে মার্কিন নাগরিক হওয়ার জন্য অযোগ্য। এদিকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত প্রায় ২ কোটি ৯০ হাজার ভারতীয় বংশোদ্ভূতদের গ্রিন কার্ড বা লিগ্যাল পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি (এলপিআর) ছিল। তারা মার্কিন নাগরিক হওয়ায় জন্য যোগ্য ছিল।