মার্কিন নির্বাচনের দিকে নজর গোটা বিশ্বের। ডোনাল্ড ট্রাম্প জিতবেন, নাকি কমলা হ্যারিস জিতবেন, এই নিয়ে চর্চা তুঙ্গে। পাশাপাশি ট্রাম্প বা কমলা জিতলে পরিস্থিতি কেমন হবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে বিভিন্ন মহলে। কারণ এই দুই প্রার্থীর এক একজনের নীতি এক একরকম। অভিভাসন নীতিতে যেমন ট্রাম্প 'কট্টরপন্থী'। কমলা নিজে ভারতীয় এবং আফ্রিকান বংশোদ্ভূত। এই আবহে সেই ইস্যুতে তিনি 'উদারপন্থী'। এদিকে ট্রাম্পের সমর্থকরাও 'কট্টরপন্থী'। গতবার নির্বাচনের ফলাফলই মানেননি তাঁরা। এই সব মিলিয়ে নির্বাচনের ফল ফের আমেরিকায় 'ঝড়' তুলবে কি না, তা ভাবচ্ছে অনেককেই। অপরদিকে এই নির্বাচনের ফলাফল ভারতের ওপর কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে জল্পনা কয়েক কোটি ভারতীয়রও। (আরও পড়ুন: ২৫০ বছর আগে যেথায় আমেরিকার জন্ম, সেই পেনসিলভেনিয়াই ভবিষ্যতের দিশা দেখাবে USA-কে?)
আরও পড়ুন: কার দিকে পাল্লা ভারী? নির্বাচনী ফলের 'আভাস' দিলেন ওবামা, মার্কিনিদের করলেন সতর্ক
কমলা জিতলে গর্ভপাত, অভিভাসন নিয়ে আশ্বস্ত হতে পারেন মার্কিনিরা
যদি এই নির্বাচনে কমলা হ্যারিস জয়ী হন, তাহলে যে শুধুমাত্র ইতিহাস তৈরি হবে তাই নয়, কট্টর রিপাবলিকান রাজনীতি এবং ট্রাম্পের মতাদর্শের 'মৃত্যু' বলেই তা ধরে নেওয়া যেতে পারে। সাম্প্রতিককালে মার্কিন মুলুকে বেশ কয়েকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা ভালো ফল করেছেন। তার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখা যেতে পারে, মার্কিন গণতন্ত্র নিয়ে মানুষের মনে আশঙ্কা। ২০২০ সালের নির্বাচনের পরে ক্যাপিটল হিলের ওপর হামলার ঘটনা এখনও অনেকেরই মনে আছে। এছাড়াও গর্ভপাত, অভিভাসনের মতো বেশ কিছু নীতিতে ট্রাম্পের কট্টরপন্থা বহু রিপাবলিকানকেও ঠেলে দিয়েছে ডেমোক্র্যাটদের দিকে। তবে কমলা হ্যারিস জিতলে এই সব ক্ষেত্রে মানুষ কিছুটা হলেও আশ্বস্ত হবেন বলে মে করা হচ্ছে। (আরও পড়ুন: বিজ্ঞানী মা ছিলেন ব্রাহ্মণ কন্যা, 'গণতন্ত্রের পাঠ' দেন দাদু, রইল কমলার 'আদি কথা')
ট্রাম্প হারলে ২০২১ সালের পুনরাবৃত্তি?
২০২১ সালে ক্যাপিট হিলে হামলার ঘটনা মার্কিন গণতন্ত্রের ইতিহাসে অন্যতম কালো অধ্যায়। অনেকেরই আশঙ্কা, ২০২৪ সালেও যদি ট্রাম্প হেরে যান, তাহলে ফের সেই ফলাফল মেনে নেবেন না তিনি। এই আবহে মার্কিন প্রশাসন আগেভাগেই 'দাঙ্গা'র প্রস্তুতি নিয়ে রেখে বহু স্থানে। আর যদি ২০২১ সালের সেই ঘটনার মতো ঘটনা ফের ঘটে মার্কিন মাটিতে, তাহলে দেশটি আরও বেশি বিভক্ত হয়ে পড়বে।
ভারতের লাভ কীসে?
বিগত বছরগুলিতে আমেরিকার 'বন্ধু' হয়ে উঠেছিল ভারত। তবে এই শেষ চার বছরে ভারত-আমেরিকার মধ্যে কিছুটা 'দূরত্ব' তৈরি হয়েছে কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তা খলিস্তানি ইস্যুতে হোক কি ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে রাশিয়ার তেল কেনা... সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের ১৯ সংস্থাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে আমেরিকা। ওয়াশিংটনের বক্তব্য, এই সংস্থাগুলি ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সাহায্য করেছিল। এর আগে রাশিয়া থেকে তেল কেনা নিয়েও দিল্লির ওপর ওয়াশিংটনের চাপ সৃষ্টির চেষ্টা দেখা গিয়েছিল। আবার খলিস্তানি নেতা গুরপতবন্ত সিং পান্নুনের হত্যার ছক কষার নেপথ্যে প্রাক্তন ভারতীয় সরকারি এজেন্টকে অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেদেশের বিচার বিভাগ। আবার খলিস্তানি জঙ্গি নিজ্জরের খুনের ঘটনায় কানাডার 'পাশে' দাঁড়িয়েছে আমেরিকা। এই আবহে ডেমোক্র্যাট সরকারের সঙ্গে ভারতের মোদী সরকারের অনেক ক্ষেত্রেই কিছুটা হলেও 'দূরত্ব' দেখা গিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে। তবে ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস যদি জেতেন, তাহরে ভারত-আমেরিকা সমীকরণ কোন দিকে এগোবে, তা নিয়ে খানিক জল্পনা থাকবে। তবে বর্তমান ডেমোক্র্যাট নীতিতে ভারত যে বাড়তি সুবিধা পাবে না, তা মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকই। (আরও পড়ুন: মার্কিন নির্বাচন যেন 'দক্ষিণ ভারতীয় মিনি ডার্বি', একদিকে কমলা, অপরদিকে ঊষা)
এদিকে এর আগে ট্রাম্প জমানায় ভারতের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক বেশ 'মধুর' ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। সেটা অবশ্য ট্রাম্প-মোদী ব্যক্তিগত রসায়ানের ফলেও হয়ে থাকতে পারে। ২০১৯-এর সেপ্টেম্বরে টেক্সাসের হিউস্টনে 'হাউডি মোদী' সভায় 'অব কি বার ট্রাম্প সরকার' স্লোগান দিয়েছিলেন মোদী। এদিকে ২০২০ সালে ভারত সফরে এসে মোদী স্টেডিয়ামে ভাষণ রেখেছিলেন ট্রাম্প। তবে ট্রাম্প জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ক্ষমতায় এলে ভারতীয় পণ্য আমদানির ওপর শুল্কের বোঝা চাপাবেন। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত।
উল্লেখ্য, মার্কিন মুলুকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভোটারের সংখ্যা ৫০ লাখের কিছু বেশি। এদের মধ্যে আবার অধিকাংশই ঐতিহাসিক ভাবে ডেমোক্র্যাট সমর্থক। এদিকে ডেমোক্র্যাট পদপ্রার্থী কমলা হ্যারিস ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তাই তাঁদের সমর্থন আরও বেশি করে হ্যারিসের দিকে ঝুঁকবে বলে আশা করছে ডেমোক্র্যাট শিবির। এদিকে ভারতীয়দের জন্যে এইচ-১বি ভিসা একটি বড় ইস্যু। পরবর্তী প্রেসিডেন্ট কোন পথে হাঁটবেন তা ভাবাচ্ছে ভারতীয়দের। এই আবহে গোটা বিশ্বের সঙ্গে ভারতরও নজর আমেরিকার দিকে। তবে কোন প্রার্থী জিতলে ভারতের বেশি লাভ, তার উত্তর হয়ত সময়ই দেবে।