২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন পেনসিলভানিয়া জিতে নিয়েছিলেন, তখন জোর ধাক্কা খেয়েছিলেন ডেমোক্র্যাটরা। ঐতিহাসিক ভাবে 'ব্লু সেট' হিসেবে পরিচিত পেনসিলভেনিয়া এখন 'সুইং স্টেট'। অর্থাৎ, যেকোনও দিকেই মার্কিন নির্বাচনের খেলা ঘুরিয়ে দিতে পারে এই রাজ্য। ২০১৬ সালের আগে বিগত প্রায় তিন দশক ধরে এই রাজ্যে একছত্র আধিপত্য বিস্তার করে ছিল ডেমোক্র্যাটরা। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের থেকে মুখ ফিরিয়েছিলেন পেনসিলভেনিয়র ভোটাররা। তবে খুব একটা বেশি ব্যবধানে এই রাজ্যের রং 'লাল' হয়নি সেবার। ২০১৬ সালে পেনসিলভেনিয়ায় মোট ৬১ লাখ ভোট পড়েছিল। আর ট্রাম্পের জয়ের ব্য়বধান ছিল মাত্র ৪৫ হাজার। তবে ২০২০ সালের নির্বাচনে এই পেনসিলভেনিয়া ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন ট্রাম্প। ফের এখানে ডেমোক্র্যাটদের নীল ঝান্ডা উড়িয়েছিলেন জো বাইডেন। তবে এবার এই রাজ্যে কী হবে? (আরও পড়ুন: বিজ্ঞানী মা ছিলেন ব্রাহ্মণ কন্যা, 'গণতন্ত্রের পাঠ' দেন দাদু, রইল কমলার 'আদি কথা')
আরও পড়ুন: মার্কিন নির্বাচন যেন 'দক্ষিণ ভারতীয় মিনি ডার্বি', একদিকে কমলা, অপরদিকে ঊষা
এমনিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কিছু প্রদেশে একছত্র ভাবে আধিপত্য বজায় রেখেছে কোনও এক রাজনৈতিক দল। যেমন নিউইয়র্ক, ক্যালিফর্নিয়ার মতো প্রদেশে জিতে আসে ডেমোক্র্যাটরা। আবার টেক্সাস ঐতিহাসিক ভাবে রিপাবলিকানদেরই গড়। এই আবহে 'সুইং স্টেটগুলির' ওপর বেশি নজর থাকে নির্বাচনের ফলাফলের জন্যে। কারণ নির্বাচনের মোড় ঘোরাতে পারে সেই প্রদেশগুলি। এই রাজ্যগুলসির ভোটাররা যেকোনও দিকে ঝুঁকতে পারেন। এবারের মার্কিন নির্বাচনে এহেন 'সুইং স্টেট' হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে মোট ৭টি প্রদেশ। তার মধ্যে অন্যতম হল পেনসিলভেনিয়া।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি প্রদেশের প্রতিটির জন্যে নির্ধারিত আছে নির্দিষ্ট সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ বা ভোট। আমেরিকায় মোট ইলেক্টোরাল কলেজ ৫৩৮। অর্থাৎ, যে প্রার্থী ২৭০ ইলেক্টোরাল কলেজ পাবেন, তিনি জয়ী হবেন। সমীক্ষা অনুযায়ী, 'ব্লু স্টেট' (যে সব প্রদেশে ডেমোক্র্যাটদের আধিপত্য) থেকে কমলা হ্যারিস ২২৬টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন বলে প্রায় নিশ্চিত। এবং 'রেড স্টেট' (যে সব প্রদেশে রিপাবলিকানদের আধিপত্য) থেকে ২১৯টি ইলেক্টোরাল কলেজ পেতে পারেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। বাকি সাত রাজ্যের ৯৩টি ইলেক্টোরাল কলেজের জন্যেই আসল লড়াই। এর মধ্যে পেনসিলভেনিয়ার ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা ১৯। এক শতক আগে এই প্রদেশের ইলেক্টোরাল কলেজের সংখ্যা ছিল ৩৮। তবে ১৯-এও যে খেলা ঘুরতে পারে, তা জানেন কমলা এবং ট্রাম্প। কারণ সুইং স্টেটগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক ইলেক্টোরাল কলেজ আছে এই পেনসিলভেনিয়াতেই। তাই তো শেষ বেলায় পেনসিলভেনিয়াতে পড়ে থেকেই প্রচার চালাচ্ছেন কমলা। আর শেষ বেলায় ট্রাম্পও পেনসিলভেনিয়ায় এসেছিলেন।
মার্কিন ইতিহাসে পেনসিলভেনিয়ার তাৎপর্য অপরিসীম। এই প্রদেশেই ১৭৭৬ সালে আমেরিকার স্বাধীনতা ঘোষণা করা হয়েছিল। এই প্রদেশেই ১৭৮৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের রচনা করা হয়েছিল। এই প্রায় আড়াইশো বছর পর ফের সেই পেনসিলভেনিয়াই আমেরিকার ভবিষ্যতের রূপরেখা তৈরি করে দিতে পারে। এখানে একদিকে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প- যিনি অভিভাসন নীতিতে কট্টরপন্থী অবস্থান গ্রহণ করেছেন। অপরদিকে আছেন উদারপন্থী ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিস। নির্বাচনে জিতলে তিনিই হবেন প্রথম মহিলা এবং দক্ষিণ এশিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন প্রেসিডেন্ট। প্রসঙ্গত, বর্তমানে পেনসিলভেনিয়ায় ৬ লাখ এশিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক থাকেন। এই আবহে প্রদেশের শহুরে অঞ্চলের ভোটার, বিশেষ করে মহিলাদের মন জয় করতে পারলে এই রাজ্য দখল করতে পারেন কমলা। আর তা হলে হোয়াইট হাউজের দৌড়ে তিনি অনেকটাই এগিয়ে যাবেন।