খলিস্তানি বিচ্ছিনতাবাদী নেতা তথা মার্কিন নাগরিক গুরপতবন্ত সিং পান্নুনকে হত্যাক ছক কষার মামলায় সম্প্রতি ‘জনৈক ব্যক্তি’র বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের কমিটি। সাম্প্রতিক রিপোর্ট দাবি করা হয়েছে, এফবিআই সেই জনৈক ব্যক্তি - 'CC1'-কে বিকাশ যাদব বলে চিহ্নিত করেছে। দাবি করা হয়, এই বিকাশ যাদব রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের প্রাক্তন অফিসার ছিলেন। এদিকে পৃথক এক মালায় এই বিকাশ যাদব বিগত দিনে জেলেও থেকেছে ভারতে। এহেন অবস্থায় বিকাশের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের সুপারিশ করার ফলে কি পান্নুন মামলায় ভারত-মার্কিন 'দ্বন্দ্ব' মিটবে? এই নিয়ে এবার মুখ খুললেন ভারতে নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক গারসেট্টি। (আরও পড়ুন: কেন ডিএ বাড়ছে না রাজ্য সরকারি কর্মীদের? অষ্টম বেতন কমিশন ঘোষণার পরই এল 'জবাব')
পান্নুন মামলায় ভারতীয় কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এরিকের বক্তব্য, 'এট নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে এটাই এই বইয়ের শেষ চ্যাপ্টার নয়। কারণ এখনও পদক্ষেপ করা বাকি আছে।' এরিক গারসেট্টি বলেন, 'ভারত যেটার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল... সেই দায়দ্ধতা এবং পদ্ধতিগত সংস্কারের পক্ষে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ এটি (কেন্দ্রের গঠিত কমিটির রিপোর্টের সুপারিশ)। আমরা এখনও এই রিপোর্ট দেখিনি। এদিকে নিউইয়র্কে এই সংক্রন্ত মামলা এখনও চলছে। তবে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছিল যে ভারত হয়ত বা এই ইস্যুতে আমাদের কথা শুনবে না। তবে আমার মনে এই ইস্যুতে ভারত এবং আমেরিকা একে অপরের কথা ধৈর্য দিয়ে শুনেছে। এমনকী স্যান ফ্রান্সিস্কোর মতো জায়গায় যেখানে ভারতীয় কূটনীতিকরা হুমকির সম্মুখীন, সেই ইস্যু নিয়েও দুই পক্ষের কথা হয়েছে এবং বোঝাপড়া বেড়েছে। কোন রেখা পার করা যাবে না, সেই বিষয়গুলি নিয়ে আমরা খুবই স্পষ্ট। এবং ভারত সেই বিষয়গুলি খুব গুরুত্ব সহকারে দেখেছে। তবে এটা এখনই ভারত বা আমেরিকার জন্যে শেষ হয়ে যাওয়া অধ্যায় নয়। রিপোর্টে পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে হবে।'
এদিকে খলিস্তান ইস্যুতে বিগত দিনে ভারত-কানাডার দূরত্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায়। সেখানে ভারতের দিকে আঙুল তুলেছিল কানাডা। তবে সেই ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে কোনও পারস্পরিক সহযোগিতে দেখা যায়নি। এই নিয়ে এরিকের বক্তব্য, 'আমরা (আমেরিকা ও ভারত) যা করতে পেরেছি, আশা করছি আমেরিকার দুই বন্ধু (কানাডা ও ভারত) আগামী দিনে নতুন করে বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে একে অপরের কথা শুনবে। কূনটৈতিক ভাবে বিষয়টি মেরামতের চেষ্টা করবে তারা। আমি মনে করি, ভারত এবং কানাডা চিরকালই খুব ঘনিষ্ঠ ছিল।'
এদিকে সম্প্রতি ভারতে এসে মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সালিভান বলেছিলেন, ভারতের পরমাণু সংস্থা ও মার্কিন কোম্পানিগুলোর মধ্যে সহযোগিতায় বাধা তৈরি করে এমন বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এই ইস্যুতে প্রশ্ন করা হলে এরিক গারসেট্টি বলেন, 'এক যুগ আগে ভারত এবং আমেরিকার এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা ভাবাও যেত না। তবে এখন থেকে একযুগ পরে এটা ভাবা যাবে না যে এই দুই দেশের বন্ধুত্ব নেই। তবে অসামরিক পারমাণবিক কর্মকাণ্ডের ক্ষেত্রে কিছু ইস্যু এখনও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই নিয়ে কথা বলেছেন। তা নিয়ে কিছু পদক্ষেপও করা হয়েছে। আমরা একসঙ্গে কাজ করার উপায় বের করব। আমার মনে হয়, এরপরে আপনারা দেখবেন, ভারত এবং আমেরিকার প্রযুক্তি আরও বেশি করে একে অপরের সঙ্গে ভাগ করা হচ্ছে। আমরা স্নায়ুযুদ্ধের সময়কাল থেকে বেরিয়ে আসতে পারব। এবং আমরা যে বর্তমানে বন্ধু আছি, সেটা স্বীকার করে নিতে পারব। ভেবে দেখুন, যদি এই ক্ষেত্রে ভারত এবং আমেরিকার একসঙ্গে চলে আসতে পারে, তাহলে আকাশ সীমাহীন। আমি নিশ্চিত পরবর্তী সময়ে ট্রাম্প প্রশাসন এটা নিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে।'