আমেরিকার নিউ অরলিন্সে ভয়াভহ হামলা চালানো শামসুদ্দিন জব্বরের গাড়িতে আইইডি ডেটোনেটর ছিল বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই আবহে সেই ডেটোনেটর ব্যবহার করে সেখানকার ফ্রেঞ্চ কোয়ার্টারে বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল জব্বর। জানা গিয়েছে, কোয়র্টারের দু'টি ফ্রিজে সেই বিস্ফোরক রেখে এসেছিল জব্বর। এদিকে উত্তর হিউস্টনে জব্বরের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে দেখা মিলেছে বোমা তৈরির সরঞ্জাম। পেশায় আইটি বিশেষজ্ঞ জব্বরের 'ওয়ার্কস্টেশন' দেখে গোয়েন্দারা ধারণা করতে পেরেছেন যে, সে বাড়িতে বসেই বোমা তৈরি করত। প্রাক্তন এই মার্কিন সেনাকর্মীর বাড়ি রীতিমতো বোমা তৈরির কারাখানা ছিল। যা দেখে আতঙ্কিক হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এহেন জব্বর আগে কেন গোয়েন্দাদের 'নজরে' পড়েননি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এদিকে জব্বরের বাড়িতে কোরানের একটি পাতা খোলা ছিল, তাতে 'হিংসাকে উৎসাহিত করা হচ্ছে' বলে দাবি করা হয় রিপোর্টে। (আরও পড়ুন: হাসিনাকে ফেরত চাইতে 'সব কাজ' শেষই করেনি ঢাকা, কী করবে দিল্লি?)
আরও পড়ুন: শুরু মান-অভিমান পালা, হাসিনা বিরোধী আন্দোলনের 'সৈনিকরা' ক্ষুব্ধ, অবরোধ ঢাকায়
এদিকে জানা গিয়েছে, এই জব্বর একটা সময়ে মার্কিন সেনায় ছিলেন। জব্বর আইটি বিশেষজ্ঞও বটে। আবার বিশ্বখ্যাত সংস্থা ডেলয়েটে বার্ষিক ১ লাখ ২০ হাজার ডলার বেতনের চাকরিও করত সে। তবে তা সত্ত্বেও সে অনেক দেনায় ডুবে ছিল বলে জানা গিয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, নিজের প্রাক্তন স্ত্রীর আইনজীবীকে এক ইমেল করে জব্বর দাবি করেছিল, তার বাড়ির ঋণের কিস্তি বাবদ ২৭ হাজার ডলার বকেয়া। এছাড়া ক্রেডিট কার্ডে ১৬ হাজার ডলার বরেয়া ছিল। এছাড়া গতবছর রিয়েল এস্টেট ব্যবসাতে ২৮ হাজার ডলার লোকসান করেছিল জব্বর। (আরও পড়ুন: ঘুষকাণ্ডে আদানির বিরুদ্ধে এখনই কোনও পদক্ষেপ নয়, জানিয়ে দিলেন চন্দ্রবাবু)
জানা গিয়েছে, জব্বর দু'বার বিয়ে করেছিল। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে তার বিবাহ বিচ্ছেদ হয় ২০২২ সালে। তার প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে জব্বরের সন্তানের কাস্টডি নিয়ে আইনি লড়াই চলছিল। এই আবহে ডেলয়েটে চাকরি, রিয়েল এস্টেটের ব্যবসা, সেনায় কাজ করার অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও মানসিক ভাবে প্রবল চাপে ছিল সে। আর্থিক ভাবে এবং পারিবারিক ভাবে একের পর এক সমস্যায় জর্জরিত হয়েছিল জব্বর। এই কারণে সে একাকিত্বে ভুগতে থাকে। আর এফবিআই-এর ধারণা, সেখান থেকেই কট্টরপন্থার পথে পা বাড়িয়েছিল জব্বর। (আরও পড়ুন: লাস ভেগাসের হামলাকারী এক মার্কিন সেনাকর্মী, বিস্ফোরণের আগে নিজের মাথায় করেন গুলি)
পুলিশ জানিয়েছে, নিউ অরলিন্সের বার্বন স্ট্রিটে ভিড়ের ওপর দিয়ে ট্রাক চালিয়ে দিয়েছিল শামসুদ্দিন। তারপর ট্রাক থেকে নেমে বন্দুক থেকে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে শুরু করেছিল সে। ঘটনাটি স্থানীয় সময় নববর্ষের ভোররাত ৩টে ১৫ মিনিটে ঘটে। নিউ অরলিন্সের যেখানে এই হামলার ঘটনাটি ঘটে, সেই জায়গায় ফরাসি বংশোদ্ভূত অধ্যুষিত। সেই ভোররাতে স্থানীয়রা রাস্তায় বর্ষবরণের আনন্দে বিভোর ছিলেন। এই আবহে একটি ফোর্ড এফ-১৫০ ইলেকট্রিক পিকআপ ভ্যান নিয়ে এই হামলা চালায় শামসুদ্দিন।
এফবিআই জানিয়েছে, সেনায় আইটি বিশেষজ্ঞ হিসেবে এক সময় কাজ করেছিল শামসুদ্দিন। আর বর্তমানে টেক্সাসের হিউস্টনে রিয়েল এস্টেট এজেনট হিসেবে কাজ করছিল সে। এই হামলার ঘটনার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় শামসুদ্দিনের ৪ বছর পুরনো একটি ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। সেখানে সে নিজের দর কষাকষি এবং মানুষের মন ভোলানোর 'দক্ষতা' নিয়ে বলছিল। এর আগে শামসুদ্দিন জব্বরের বিরুদ্ধে দু'টি ছোটখাটো অপরাধের অভিযোগ ছিল। ২০০২ সালে চুরি এবং ২০০৫ সালে মেয়াদ উত্তীর্ণ ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালানোর অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে।