পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ সংক্রান্ত মামলায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সাজা শোনাল নিউইয়র্কের আদালত। রায়তে যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট 'নিঃশর্ত অব্যাহতি' দিয়েছে আদালত। তবে 'নিঃশর্ত অব্যাহতি' পেয়েও ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি এই রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করবেন। এরই সঙ্গে তাঁর বিরুদ্ধে বাইডেন প্রশাসন 'উইচহান্ট' চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ট্রাম্প। নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম 'ট্রুথসোশ্যাল'-এ ট্রাম্প লেখেন, বিচার বিভাগের মদতে গত কয়েক বছর ধরে লাখ লাখ ডলার খরচ করা হয়েছে এই মামলায়। তবে এই মামলায় আমাকে নিঃশর্ত অব্যাহতি দেওয়ার মাধ্যমে তারা হেরে গিয়েছেন। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন ছিল। আমাকে নিঃশর্ত অব্যাহতি দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছে যে আমার বিরুদ্ধে কোনও কেসই দাঁড়ায় না। (আরও পড়ুন: গভীর রাতে শাসকদলের বিধায়কের গুলিবিদ্ধ দেহ উদ্ধার, রহস্যজনক মৃত্যুর তদন্তে পুলিশ)
আরও পড়ুন: সংসদে মহিলাদের ৩৩% সংরক্ষণের আইনকে চ্যালেঞ্জ, মামলার আবেদন নিয়ে কী বলল SC?
এদিকে ট্রাম্প নিজের পোস্টে দাবি করেন, এই 'ভুয়ো' মামলার বিরুদ্ধে তিনি আবেদন করতে চান। এই মামলার গোটা বিচার প্রক্রিয়া পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। এই মামলার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হস্তক্ষেপের চেষ্টা হয়েছিল বলে অভিযোগ ট্রাম্পের। এদিকে এই মামলায় 'জুরি'র বিরুদ্ধে তোপ দেগে ট্রাম্প বলেছেন, এই মামলায় আসল জুরি হল মার্কিন জনগণ। তাঁরা আমাকে দেশের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করেছেন। ট্রাম্পের বক্তব্য, 'আসল কথা হলো আমি সম্পূর্ণ নির্দোষ। আমি কোনও অন্যায় করিনি।'
প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে পর্নস্টার স্টর্মি ড্যানিয়েলসকে ঘুষ দেওয়ার মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগের সবকটিতেই দোষী সাব্যস্ত হন ট্রাম্প। এই আবহে ট্রাম্পই প্রথম 'প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট', যিনি কি না ফৌজদারি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হন। তবে এবার তিনি আবারও প্রেসিডেন্টের গদিতে বসতে চলেছেন। প্রসঙ্গত, প্রথম মার্কিন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হিসেবে কোনও ফৌজদারি মামলার বিচারে হাজির হয়ে লজ্জার ইতিহাস গড়েছিলেন ট্রাম্প। আর সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছিলেন এই রিপাবলিকান। এই আবহে ট্রাম্পের সাজা হওয়ার কথা থাকলেও নির্বাচনে জয়ের পর সেই সাজা পিছিয়ে দেন বিচারক।
উল্লেখ্য, নিজের যৌন কেলেঙ্কারি ধামাচাপা দিতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছিল নিউ ইয়র্কের আদালতে। সেই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে 'ইতিহাস' গড়েছিলেন ট্রাম্প। এই মামলায় মোট ৩৪টি অভিযোগ ছিল ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। তবে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েও প্রেসিডেন্ট হতে কোনও বাধা নেই ট্রাম্পের সামনে। প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনী প্রচারের সময় পর্নস্টার স্টর্মির মুখ বন্ধ করতে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছিল এই মামলা। স্টর্মির দাবি, ২০০৬ সালে নেভেদায় সেলেব্রিটিদের একটি গলফ প্রতিযোগিতায় ট্রাম্পের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। এরপর ২০০৭ সালে একটি শো'তে অংশগ্রহণ করে লস অ্যাঞ্জেলসে বেভারলি হিলসে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর বাংলোয় দেখা করেছিলেন স্টর্মি।
এরপর ২০১১ সালে ইন টাচ ম্যাগাজিনে স্টর্মি দাবি করেন যে ট্রাম্পের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ছিল। সেই সংক্রান্ত একাধিক তথ্যও দিয়েছিলেন। তিনি দাবি করেছিলেন যে ট্রাম্প তাঁর সঙ্গে যৌন সম্পর্কে লিপ্ত ছিলেন। এই বিতর্কের পর ২০১৬ সালে রিপাবলিকানদের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ান ট্রাম্প। মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৬ সালের অক্টোবরে ট্রাম্পের সঙ্গে 'সম্পর্কের' বিষয় নিয়ে মুখ না খোলার জন্য স্টর্মিকে ১৩০,০০০ মার্কিন ডলার দিয়েছিলেন প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আইনজীবী। এরপর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসে ট্রাম্পের আইনজীবী দাবি করেছিলেন যে স্টর্মিকে নিজের থেকে অর্থ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প ওই বিষয়ে কোনও নির্দেশ দেননি। তবে আদালতে এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছিলেন ট্রাম্প।