বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনুস বারবার দাবি করছেন, সেদেশের সংখ্যালঘু - বিশেষত, হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর অত্যাচারের যেসমস্ত অভিযোগ করা হচ্ছে, তার অধিকাংশই নাকি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের মিথ্যা প্রচার!
তবে, ইউনুস যাই বলুন না কেন, তাতে যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ মোটেও সন্তুষ্ট নয়, সেটা আরও একবার স্পষ্ট হয়ে গেল। কারণ, ফের একবার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে অসন্তোষ এবং উদ্বেগ প্রকাশ করল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ নিয়ে আরও একবার বলা হল, 'বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত খবর (সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার সংক্রান্ত) আসছে, তাতে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।'
বৃহস্পতিবার এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের হিন্দি ও উর্দুভাষী মুখপাত্র মার্গারেট ম্যাকলিওড।
ওই দিন তাঁকে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কিছু প্রশ্ন করা হয়। যার জবাবে মার্গারেট বলেন, 'আমরা সর্বক্ষণ পরিস্থিতির উপর নজর রাখছি। আমরা আশা করব, ওই অঞ্চলের প্রত্যেক বাসিন্দা তাঁদের ধর্মীয় বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখেই বসবাস করতে পারবেন।...'
মার্গারেট আরও বলেন, '...মার্কিন সরকার সংশ্লিষ্ট সমস্ত পক্ষের সঙ্গেই এ নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার তরফে বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গেও কথা বলা হচ্ছে।'
প্রসঙ্গত, এর আগেও আমেরিকার তরফে বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছিল। ইস্কনের সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি এবং আদালতে তাঁকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দেওয়ার ঘটনা যে মার্কিন প্রশাসন মোটেও ভালোভাবে নেয়নি, তা স্পষ্টভাবেই বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল ঢাকাকে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবারই চট্টগ্রামের আদালতে পেশ করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণকে। কিন্তু, তাঁর হয়ে আদালতে একজনও আইনজীবীকে সওয়াল করতে দেয়নি কট্টরপন্থীরা। ফলত, জামিন পাননি ওই সন্ন্যাসী। উপরন্তু, এই মামলার শুনানি একমাসের জন্য স্থগিত করে দেওয়া হয়।
এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া আসে ওয়াশিংটন থেকে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের এক মুখপাত্র বলেন, যাঁদের বাংলাদেশের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের মানবাধিকার এবং আইনি লড়াই লড়ার অধিকার বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রিন্সিপাল ডেপুটি মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল। এক সাংবাদিক তাঁর কাছে জানতে চান, বাংলাদেশে ধৃত সন্ন্যাসী তাঁর হয়ে মামলা লড়ার জন্য একজন আইনজীবী পর্যন্ত পাচ্ছেন না। এ নিয়ে মার্কিন প্রশাসনের অবস্থান কী?
এই প্রশ্নের জবাবে বেদান্ত বলেন, 'ওখানে (বাংলাদেশে) মৌলিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে হবে। প্রত্যেক ধর্ম ও সম্প্রদায়ের প্রতি সম্মান বজায় রাখতে হবে। ন্যূনতম মানবাধিকার রক্ষা করতে হবে।'
আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট করে বেদান্ত আরও জানান, এই বিষয়গুলি বিশ্বের সব দেশের সরকারই রক্ষা করবে, মার্কিন প্রশাসন তেমনটাই আশা করে। একই সুর শোনা গিয়েছে মার্গারেটের গলাতেও।