শেখ হাসিনা বিদায়ের পর বাংলাদেশে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে প্রথম থেকেই সাহায্য করার বার্তা দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এর আগের শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক মোটেও ভালো ছিল না। তবে মহম্মদ ইউনুস মসনদে বসার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেনি। বরং সেখানে অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে। এই আবহে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুললেন হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক জনসংযোগ উপদেষ্টা জন কার্বি। তাঁর কথায়, 'বাংলাদেশের পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।' তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনার বিদায়ের পর থেকে বাংলাদেশের নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুব গুরুতর হয়েছে।' এই আবহে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অন্তরবর্তী সরকারকে দায়বদ্ধ করা হবে বলে জানান কার্বি।
জন কার্বি বলেন, 'বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে আমরা কাজ করছি। তাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা তাদের পাশে আছি।' এরপর তিনি আরও বলেন, 'আমরা বাংলাদেশি নেতাদের স্পষ্ট জানিয়েছি যে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা প্রদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং অন্তর্বর্তী সরকার সকল বাংলাদেশিকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে বদ্ধপরিকর বলে জানিয়েছে বারবার।' উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচারের ঘটনার প্রতিবাদে আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রাজা কৃষ্ণমূর্তি সেনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির কাছে আবেদন করেন যাতে বাংলাদেশ ইস্যু নিয়ে তারা আলোচনা করেন। উল্লেখ্য, ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও এর আগে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। এমনিতেই দাবি করা হয়, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনুসের ব্যক্তিগত ভাবে সম্পর্ক খারাপ। আবার ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে নাকি ইউনুসের সম্পর্ক বেশ মাখো মাখো।
এদিকে আজ বাংলাদেশ নিয়ে লোকসভায় এস জয়শংকর বলেন, 'বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের সঙ্গে যা হচ্ছে, তা আমাদের কাছে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাদের ওপর হামলার একাধিক ঘটনা ঘটেছে। আমরা আমাদের উদ্বেগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। সম্প্রতি ভারতের বিদেশ সচিব ঢাকা সফর করেন। তাঁর বৈঠকে এই বিষয়টি উঠে এসেছে। আমরা আশা করছি যে বাংলাদেশ তাদের নিজস্ব স্বার্থেই ব্যবস্থা নেবে যাতে সেখানকার সংখ্যালঘুরা নিরাপদে থাকে।'
উল্লেখ্য, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর অত্যাচারের অভিযোগ উঠে আসছে। হাসিনার বিদায়ের পর থেকেই মন্দির থেকে শুরু করে হিন্দুদের বাড়িঘরে ভাঙচুর চলেছে। সেই সময় বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা থেকে বিএনপি-জামাত দেখেছিল 'আওয়ামি লিগের ষড়যন্ত্র'। তবে কয়েক মাস যাওয়র পর সেই দেশে হিন্দুদের অবস্থা যেন আরও খারাপ। ধর্মের নামে চাকরি থেকে জোর করে পদত্যাগ করানো হচ্ছে সংখ্যালঘুদের। অনেককে ধর্মান্তরিত করানোর অভিযোগও উঠেছে। এরই মাঝে চট্টগ্রামে হিন্দু এবং বৌদ্ধদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যালঘু অত্যাচারে সেখানে অভিযুক্ত খোদ সেনা। হিন্দু সন্ন্যাসী চিন্ময় কৃষ্ণ দাস প্রভুর গ্রেফতারি ঘিরে আরও উত্তাল হয় পরিস্থিতি। এদিকে সেখানে ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বাংলাদেশের কট্টরপন্থীরা পথে নেমেছে। 'জুলাই বিল্পবের' ছাত্র নেতারাও ইসকনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। সারজিস আলম চট্টগ্রামে ইসকন এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ভাষণ দিয়েছেন সম্প্রতি। এই আবহে ভারতের রাস্তাতেও লোক নেমেছে। বাংলাদেশি মৌলবাদে বিরুদ্ধে স্লোগান উঠেছে এখানে। ভারত সরকারও একাধিক বিবৃতি প্রকাশ করে ওপারের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।