ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতা ক্রমশ খর্ব হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ তুলেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি সরকারি কমিশন।
ওই মার্কিন কমিশনের বক্তব্য হল, যত দিন যাচ্ছে, ভারতে আমজনতার ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এই ঘটনায় অত্যন্ত উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, মার্কিন সরকারের সংশ্লিষ্ট কমিশনের রিপোর্টে, স্বাধীনভাবে ধর্মাচারণের প্রশ্নে ভারতকে 'বিশেষ উদ্বেগের রাষ্ট্র' হিসাবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
এই কমিশনের পক্ষ থেকে যে রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি লিখেছেন, বরিষ্ঠ নীতি বিশ্লেষক সীমা হাসান। সেই রিপোর্টে ভারত বিষয়ক অধ্যায়ে যে কথা বলা হয়েছে, তা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তাতে লেখা হয়েছে, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘু নাগরিকদের উপর এবং তাঁদের উপাসনাস্থলগুলিতে হিংসাত্মক হামলা চালানো হচ্ছে। এমনকী, সেই হিংসায় অনেক সময় সরকারি আধিকারিকরাই মদত দিচ্ছেন!
ওই সরকারি আধিকারিকরা ঘৃণা ভাষণ করছেন। সেইসঙ্গে, বহু ভুল তথ্য ও বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা বিষয়ক কমিশন (ইউএসসিআইআরএফ)-এর তরফ থেকে এই রিপোর্ট সামনে আসায় স্বাভাবিকভাবেই দুই দেশের সম্পর্কের উপর এর কী প্রভাব পড়তে চলেছে, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে।
ইউএসসিআইআরএফ তাদের প্রকাশ করা বার্ষিক রিপোর্টে ভারত সম্পর্কে রীতিমতো উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে আমেরিকার স্বরাষ্ট্র দফতরকে পরামর্শ দিয়েছে, লাগাতার ধর্মীয় হিংসা চালানোর জন্য ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য ভারতকে 'বিশেষ উদ্বেগের রাষ্ট্র' হিসাবে ঘোষণা করা হোক।
যদিও শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দফতর এখনও পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কমিশনের এই প্রস্তাবে সায় দেয়নি।
ইউএসসিআইআরএফ-এর তরফে তাদের প্রকাশ করা বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, '২০২৪ সাল জুড়ে কীভাবে নীতিপুলিশদের হাতে বহু মানুষ খুন হয়েছেন, তাঁদের গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে, কীভাবে (সংখ্যালঘু) ধর্মীয় গুরুদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে, তার বিস্তারিত তথ্য এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়ি এবং উপাসনাস্থল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা ধর্মীয় স্বাধীনতার চরম বিরোধী ও পরিপন্থী।'
এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের আমল থেকে এখনও পর্যন্ত লাগাতার ইউএসসিআইআরএফ-এর সদস্যদের ভারতে যাওয়ার জন্য ভিসা অনুমোদন করা হচ্ছে না। যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, ইউএসসিআইআরএফ-এর প্রতিনিধিরা নাকি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করার অপচেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, ভারত সরকার ও ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিকদের একাধিক সংস্থা ও সংগঠনের পালটা দাবি, ইউএসসিআইআরএফ প্রথম থেকেই পক্ষপাতদুষ্ট। তারা অবৈজ্ঞানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে রিপোর্ট তৈরি করে তা পেশ করছে।
এমনকী, ইউএসসিআইআরএফ-এর এহেন আচরণের নেপথ্যে গভীর অভিসন্ধি রয়েছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়েছে। তারা ভারতের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করতে চাইছে বলেও ইউএসসিআইআরএফ-এর বিরুদ্ধে তোপ দাগা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউএসসিআইআরএফ-এর রিপোর্টে বলা হয়েছে, 'এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে, কীভাবে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে নিশানা করতে ভারতের আইনি ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত বদলে ফেলা হচ্ছে। যার মধ্যে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) অন্যতম।'
এছাড়াও, ওই রিপোর্টে ইউনিফর্ম সিভিল কোড এবং রাজ্যস্তরে ধর্মান্তরবিরোধী ও গোসম্পদ রক্ষা সংক্রান্ত একাধিক নয়া ও সংশোধিত আইন প্রবর্তনেরও কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।