ভোটের পিচ প্রস্তুত। এদিকে, দলীয় 'জার্সি বদল' এর ধারা অব্যাহত উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে। গত ৭২ ঘণ্টায় যোগীমন্ত্রিসভা ছেড়েছেন ৩ জন। এছাড়াও ৬ জন বিধায়ক পদ্মবিমুখ হয়েছেন। এর আগে, সমাজবাদী পার্টির শরদ পাওয়ার আভাস দিয়েছিলেন যে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি ছেড়ে ১৩ জন বিধায়ক সপার দিকে যাচ্ছেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী কতটা সঠিক হয়, তার উত্তর সময় দেবে। তবে আপাতত যোগীগড়ে যে রাজনৈতিক ট্রেন্ড দেখা যাচ্ছে, তাতে পর পর বিজেপি নেতারা অখিলেশ ক্যাম্পের দিকে ঝুঁকছেন। এদিকে, দল ছেড়ে এদিন বিজেপির মন্ত্রী ধরম সিং সাইনি জানান দিয়ে দিয়েছেন , আগামী ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত রোদ একজন করে বিজেপি বিধায়ক দল ছাড়বেন।
ভোটের কাউন্টডাউন শুরু হতেই যোগীদূর্গে পর পর ধাক্কা। টানা ৩ দিনে বিজেপির মন্ত্রিসভা ছেড়েছেন স্বামী প্রসাদ মৌর্য, দারা সিং চৌহান, ধরম সিং সাইনি। মঙ্গলবার যোগী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করতেই স্বামীপ্রসাদ সদর্পে জানান দিয়েছিলেন যে , তিনি যে শিবিরে থাকেন , তাদেরই সরকার গঠিত হয়। এককালে মায়াবতীর বিএসপি সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য বিজেপিতে পরে যোগ দিলেও, ২০২২ উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের আগে তিনি সমাজবাদী পার্টিতে যোগ দিয়েছেন। এদিকে, বৃহস্পতিবার ধরম সিং সাইনি পদ্মক্যাম্প ছাড়তেই সপার নেতা অখিলেশের সঙ্গে দেখা করেন। যে ছবি টুইট করে অখিলেশ তাঁরে সমাজবাদী পার্টি(সপা) তে 'স্বাগত' জানিয়েছেন। ফলে ভোট পূর্ববর্তী গণিত কার্যত স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে উত্তরপ্রদেশের বুকে। এবার আসা যাক ছয় বিধায়কের দিকে। উত্তরপ্রদেশের তিন্ডওয়ারি, তিলহারের বিধায়ক সহ একাধিক হেভিওয়েট ইতিমধ্যেই পদ্ম-বিমুখ হয়েছেন। তাঁরা যে সমাজবাদী পার্টির 'সাইকেল' শিবিরের দিকেই যেতে প্রস্তুত তা নিশ্চিত করছে ওয়াকিবহাল মহল। এদিকে, শুধু যে তাঁরাই অখিলেশের ঝান্ডা ধরবেন , তা নয়, এঁদের অনুরাগীরাও যে একই সঙ্গে জার্সি বদল করতে চলেছেন তা বলাই বাহুল্য। সব মিলিয়ে বিজেপির দুর্গে এই ঘটনা বেশ বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন অনেকেই। কয়েকদিন আগে পর্যন্তও যেখানে বিভিন্ন ওপিনিয়ন পোল-এ উত্তরপ্রদেশে যোগীর রথকে অপ্রতিরোধ্য বলে মনে করা হচ্ছিল , সেখানে নতুন এই দলবদলের ট্রেন্ড বহু হিসাব পাল্টাতে পারে কি না, তা নিয়ে রয়েছে জল্পনা।
প্রশ্ন উঠছে, ৭২ ঘণ্টায় বিজেপির ৯ তাবড় নেতার এই দলবদল গেরুয়া ক্যাম্পে কি আদৌ প্রভাব ফেলবে? এর উত্তর পেতে, গোবলয় রাজনীতির কিছু আনাচকানাচে নজর রাখা যাক। উল্লেখ্য, যোগী আদিত্যনাথ নিজে ঠাকুর সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি। উত্তরপ্রদেশের তখতে যোগীর কর্তৃত্ব ঘিরে ইতিমধ্যেই সেখানে ব্রাহ্মণদ সম্প্রদায়ের কিছুটা মন কষাকষি রয়েছে, বলে মনে করেন বহু বিশ্লেষক। এদিকে, গত ৩ দিনে যে সমস্ত মন্ত্রীরা পদত্যাগ করেছেন বিজেপি থেকে , তাঁদের মধ্যে ২ জনই অনগ্রসর শ্রেণির প্রতিনিধি। ভোট-গণিতের হিসাবে, যোগীকে নিয়ে ব্রাহ্মণদের তরফে যে অসন্তোষ রয়েছে, তার ঘাটতি মেটাতে বিজেপি দলিতদের ভোটব্যাঙ্ক নিশানায় রেখেছিল। তবে, বর্তমানে যেভাবে পর পর দলিত হেভিওয়েটরা অখিলেশ শিবিরের দিকে যাচ্ছেন, তাতে বিজেপির পক্ষে বহু অঙ্কের গড়মিল হবে কি না, তার উত্তর দিতে পারে ১০ মার্চ! যেদিন উত্তরপ্রদেশের মসনদে কে থাকবে, তার রায় প্রকাশ্যে আসবে।