কয়েকদিন আগেই নিজের লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীতে গিয়ে ৩৩৯ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা কাশী বিশ্বনাথ করিডোরের উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রকল্পের ফলে কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের আশেপাশে সেই চেনা অলিগলির দেখা মিলবে না আর। তবে এবার থেকে সোজা গঙ্গা থেকে করিডোর দিয়ে হেঁটে চলে আসা যাবে মন্দিরে। নয়া প্রজন্মের চাহিদা বুঝে ঐতিহ্যের ‘গলি’ ছেড়ে বিশ্বনাথকে আধুনিক ‘হাইওয়ে’তে নিয়ে এসেছেন প্রধানমন্ত্রী। আর আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে এই প্রকল্প বড় হাতিয়ার হতে চলেছে গেরুয়া শিবিরের।
বারাণসীর মন্দিরকে নতুন রূপে ঢেলে সাজানোর এই প্রকল্পকে ‘উন্নয়নের মডেল’ হিসেবে তুলে ধরা হবে বিজেপির তরফে। এই একই ‘উন্নয়নের মডেল’ গোটা ভারতে ছড়িয়ে দেওয়ার বার্তা দিয়েই উত্তরপ্রদেশবাসীর মন জয়ের ছক কষছে পদ্ম শিবির। ধর্ম-উন্নয়ন হাতে হাত মিলিয়ে কীভাবে এগোতে পারে, তার নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হবে বারাণসীর এই মন্দিরকে। ২০১৯ সালে কাশী করিডোরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল। আর মাত্র দুই বছরের মধ্যে এই জচিল প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে, তাতে অবাক অনেকেই।
এই প্রকল্প তৈরি করতে বহু মানুষকে ঘরছাড়া করতে হয়েছে। পুরোনো ঐতিহ্যকে মুছে নতুনের পথে হাঁটতে হয়েছে। তবে বারাণসীবাসী এই উন্নয়নের জন্য হাসিমুখে সব সহ্য করেছে। এই প্রকল্পের জন্য অবশ্য কৃতিত্ব দাবি করেছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদবও। তবে এই প্রকল্পের কৃতিত্ব যে গেরুয়া শিবির অন্য আর কাউকে দিতে নারাজ, তা স্পষ্ট। আর এই মন্দিরের মাধ্যমে বিজেপি তুলে ধরতে চেয়েছে, কীভাবে ভারতের পুরোনো ঐতিহ্যকে ধরে রেখে উন্নয়ন করতে চায় তারা। বিজেপির বক্তব্য, বিশ্বনাথ মন্দিরকে শুধু ধর্মীয় স্থান হিসাবে দেখার বদলে সেখানের উন্নয়নের মজেলকে দেখা হোক।
বিরোধীরা কাশী বিশ্বনাথের নেপথ্যে যতই ‘হিন্দুত্ববাদী’ নীতি দেখুক না কেন, বিজেপির দাবি, এই মন্দির আদতে ‘সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ’। এই প্রকল্পের কাজ চলাকালীন বিরোধীরা অভিযোগ করেছিল যে বহু অনিচ্ছুক মানুষের বাড়ি ভাঙা হচ্ছে, পুরোনো সব মন্দির ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তবে বিজেপি দাবি করে, এই প্রকল্পের সময় উদ্ধার হওয়া প্রায় ৪০টি মন্দিরকে নতুন করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। মাটির তলা থেকে মেলা মূর্তি সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর এই মডেল অনুসরণ করেই আগামীতে মথুরাতেও কাজে নামতে পারে বিজেপি। পূর্ব উত্তরপ্রদেশে এই বিশ্বনাথ মন্দিরের দৌলতেই জাত ভিত্তিক মেরুকরণের জাল কেটে হিন্দু ভোটকে একত্রিত করতে চাইছে বিজেপি।