যোগীগড়ের মসনদ দখলের মহারণ ঘিরে ইতিমধ্যেই তেতে উঠেছে গোবলয়ের রাজনীতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবির নিজের মতো করে স্ট্র্যাটেজি তৈরির পাশাপাশি নেমে পড়েছে ভোট প্রচারে। হাইভোল্টেজ এই নির্বাচনে একদিকে বিজেপির যোগী শিবির, অন্যদিকে অখিলেশ, মায়াবতী, প্রিয়াঙ্কাসহ একাধিক বিরোধী শিবিরের নেতানেত্রীরা পর পর ভোট প্রচারে পারদ তুঙ্গে রেখেছেন। এই মুহূর্তে প্রশ্ন একটাই, ২০২২ সালে উত্তরপ্রদেশের তখত কে দখল করবে? যার উত্তরের সন্ধানে ভোটের আগেই এবিপি-সিভোটার চালিয়েছে সমীক্ষা।
ডিসেম্বরের শেষ দিকে এবিপি-সিভোটার একটি সমীক্ষা করে উত্তরপ্রদেশের ভোট-গণিত নিয়ে। ২৯ ডিসেম্বরের এই সমীক্ষায় একাধিক এমন তথ্য় উঠে এসেছে, যাতে মনে করা হচ্ছে, আসন্ন ২০২২ বিধানসভা নির্বাচনে উত্তরপ্রদেশের বুকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখা যেতে পারে। সমীক্ষায় ৪৯ শতাংশ মানুষ মনে করছেন যে, উত্তরপ্রদেশে ফের একবার সরকার গড়বে বিজেপি। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ মানুষ মনে করছেন যে উত্তরপ্রদেশের তখত এবার সমাজবাদী পার্টির অখিলেশের কাছেই যাবে। উল্লেখ্য, এখনও পর্যন্ত এই নির্বাচন ঘিরে উত্তরপ্রদেশে যা হাওয়া, তাতে বিজেপি-সপাকে ঘিরে 'কাঁটে কি টক্কর' হতে পারে বলে সমীক্ষায় ইঙ্গিত উঠে আসছে।
এদিকে, এবিপি-সিভোটারের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ৮ শতাংশ মানুষ বলছেন উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর সরকার আসতে পারে। সেক্ষেত্রে, সমীক্ষায় অখিলেশ শিবিরের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন মায়াবতী। এদিকে, ৬ শতাংশ মানুষ এই নির্বাচনে কংগ্রেসের সরকারকেই চান বলে উঠে এসেছে সমীক্ষায়। এদিকে, ২ শতাংশ মানুষ বলছেন উপরোক্ত সমস্ত দল বাদে অন্য কোনও রাজনৈতিক শক্তি সরকার গড়তে পারে। এদিকে, ৩ শতাংশ মানুষ বলছেন, উত্তরপ্রদেশে ত্রিশঙ্কু হতে পারে সরকার। ৩ শতাংশ মানুষ এবিষয়ে কোনও মত দিতে পারেননি।
উল্লেখ্য, ২৯ ডিসেম্বর যে প্রশ্ন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনকে ঘিরে মানুষের সামনে রাখা হয়েছিল, সেই একই প্রশ্ন ২৩ ডিসেম্বর করা হয়েছিল। তখন দেখা গিয়েছিল যে বিজেপির পক্ষে রয়েছেন ৪৮ শতাংশ মানুষ। এরপর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই বিজেপির পক্ষে আরও এক শতাংশ সমর্থন উঠে এসেছে ২৯ ডিসেম্বরের সমীক্ষায়। এদিকে, অখিলেশ শিবিরের পক্ষে ২৩ ডিসেম্বর ছিলেন ৩১ শতাংশ মানুষ, আর ২৯ ডিসেম্বর সেই সংখ্যা ৩০ শতাংশ হয়। কংগ্রেসের সমর্থন ২৩ ডিসেম্বরেও ৬ শতাংশ ছিল, ২৯ ডিসেম্বরেও তাই। এদিকে, বিএসপির সমর্থন ২৩ ডিসেম্বর ৭ শতাংশ ছিল যা ২৯ ডিসেম্বর ৮ শতাংশে পৌঁছয়।
এদিকে, এই নির্বাচনের অন্যতম ফ্যাক্টর হিসাবে অনেকেই কৃষি আন্দোলনকে মনে করেন। সেই জায়গা থেকে দেখা যাচ্ছে, কৃষি আন্দোলন যেখানে ঝড় তুলেছিল , উত্তরপ্রদেশের সেই সমস্ত জায়গায় অর্থাৎ অবধ, বুন্দেলখন্ড পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধীদের ছাপিয়ে যাচ্ছে। অবধে বিজেপি, ৪৪ , সপা ৩১ ও বিএসপি ১০ শতাংশের সমর্থন পাচ্ছে বলে দেখা যাচ্ছে সমীক্ষায়। এই জায়গায় কংগ্রেস ৮ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছে। পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে ৪০ শতাংশ ভোট বিজেপির খাতায় যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেক্ষেক্রে সপা ৩৩, বসপা ১৫,কংগ্রেসের ঝুলিতে ৭ শতাংশ ভোট আসতে পারে বলে মনে করছে সমীক্ষা। উল্লেখ্য, গোবলয় রাজনীতিতে যদি উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক ঘটনা হয়, তাহলে তার নিউক্লিয়াস লুকিয়ে রয়েছে পূর্বঞ্চলের ১৩০ টি আসনে। এই এলাকা দখল আসন্ন ভোটের সবচেয়ে বড় ডিসাইডিং ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন বহু রাজনৈতিক বিশ্লেষক। এই এলাকায় সিভোটারের সমীক্ষায় বিজেপির ঝুলিতে ৪১, সপার কাছে ৩৬ শতাংশ ভোট থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত উঠছে। বুন্দেলখন্ডের ১৯ টির মধ্যে বিজেপির সমর্থনে ৪২ শতাংশ ভোট যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এখানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইতে সপা থাকছে। সমীক্ষা বলছে, এই এলাকায় অখিলেশ শিবির ৩৩ শতাংশের সমর্থন পেতে পারে।