মেডিক্যাল চেকআপের জন্য পুত্র শোকে বিহ্বল আতিক আহমেদ ও তাঁর ভাইল আশরাফকে পুলিশ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময়ই পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে গুলি করে খুন করা হয় দুই ধৃত কয়েদিকে। এই ঘটনায় গোটা দেশে তোলপাড় শুরু হয়েছে। উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অখিলেশ যাদব, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা। আর এবার আতিক হত্যাকাণ্ডের নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র তদন্তের দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলা শুনতে রাজি হয়েছে শীর্ষ আদালত। জানা গিয়েছে, ২০১৭ সাল থেকে উত্তরপ্রদেশে যত এনকাউন্টার হয়েছে, তার সবকটির নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে মামলা করেছেন বিশাল তিওয়ারি নামক এক আইনজীবী। পুলিশি হেফাজতে থাকা আতিকের হত্যাকাণ্ডের বিষয়টিও মামলায় যুক্ত করেছেন তিনি। মামলাটির শুনানি হবে আগামী ২৪ এপ্রিল।
আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বিশাল তিওয়ারির করা মামলাটি নোট করেন। আইনজীবী মামলাটির দ্রুত শুনানির আবেদন করেছিলেন। আবেদনে তিনি দাবি করেছেন, ২০১৭ সাল থেকে ১৮৩টি এনকাউন্টারের ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। উল্লেখ্য, আতিক ও আশরাফের মৃত্যুর একদিন আগেই আতিকের ছেলে আসাদ ও তার এক সহযোগীকে এনকাউন্টারে খতম করেছিল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। সেই ঘটনা ঘটেছিল ঝাঁসিতে। এমনকী উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আরও দু'জনকে সম্প্রতি খতম করেছে পুলিশ। এদিকে আতিক হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত তিন যুবককেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, আতিককে গুলি করে খুন করার ঘটনায় ধৃতদের নাম হল লাভলেশ তিওয়ারি, অরুণ মৌর্য এবং সানি সিং। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, আতিক ও আশরাফকে গুলি করার পর সানি, লাভলেশরা 'জয় শ্রী রাম' স্লোগান তুলেছিল। এদিকে আতিক ও আশরাফকে খুনের পরই সানি, অরুণ এবং লাভলেশকে ধরে ফেলে পুলিশ। উল্লেখ্য, একদিন আগেই আতিকের ছেলে আসাদ আহমেদের মৃত্যু হয়েছিল এক এনকাউন্টারে। ছেলের শেষযাত্রায় অংশ নেওয়ার জন্য আতিক আবেদন জানালেও তাঁকে ছাড়া হয়নি। এই আবহে শনিবার রাত ১০টা নাগাদ আতিককে প্রয়াগরাজের এক সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য। সেখানেই গাড়ি থেকে নামার পর আতিককে ঘিরে ধরেছিলেন সাংবাদিকরা। তাঁর ছেলের শেষযাত্রা না যেতে পারা নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছিল আতিককে। প্রথমে কিছু বলতে না চাইলেও কয়েক পা যাওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিতে শুরু করেছিলেন আতিক। কিছু কথা বলার পরই আচমকা আতিকের বাঁদিক থেকে একটি বন্দুকধারী এসে মাথায় 'পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জে' গুলি করে তাঁকে।
এরপর আতিকের পাশে থাকা তাঁর ভাই আশরাফকেও গুলি করে খুন করা হয়। এই গোটা ঘটনা সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এরপরও বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি চলার আওয়াজ শোনা যায়। প্রসঙ্গত, আতিকের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে। তবে সাম্প্রতিককালে তাঁর নাম জড়িয়েছিল আইনজীবী উমেশ পাল হত্যাকাণ্ডে। ২০০৫ সালে বিএসপি বিধায়ক রাজু পাল হত্যাকাণ্ডে অন্যতম মূল সাক্ষী ছিলেন উমেশ পাল। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সেই উমেশ পাল এবং দুই পুলিশকর্মীকে গুলি করে খুন করা হয়েছিল। সেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছ ৫০ দিনের ব্যবধানে।