মুখ্যমন্ত্রী পদে বসেই বিতর্ক তৈরি করলেন তিরথ সিং রাওয়াত। মহিলাদের রিপড জিন্স পরা নিয়ে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে সমালোচনার ঝড় তুলেছেন নেটাগরিকরা। ছেঁড়া জিন্স পরা নিয়ে রীতিমতো আপত্তি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করা হচ্ছে বলে সরব হয়েছেন রাওয়াত। যেখানে পশ্চিমী দেশগুলি আমাদের যোগাসনকে অনুসরণ করছেন, সেখানে কেন ভারতীয়রা ছেঁড়া জিনস পড়ছেন, এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। আর তাতেই সমালোচনার ঝড় উঠেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার শিশুদের অধিকার নিয়ে উত্তরাখণ্ড রাজ্য কমিশন দেরাদুনে একটি বিশেষ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে উপস্থিত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মহিলাকর্মীকে ছেঁড়া জিন্সের প্যান্ট পরতে দেখে তিনি বিস্মিতবোধ করছেন বলে জানান। এমনকী এই পোশাক শিশুদের মনে এবং সমাজে খারাপ দৃষ্টান্ত তৈরি করবে বলেও জানান তিনি। তখন মহিলা সমাজকর্মী তীব্র আক্রমণ করে বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর কোনও অধিকার নেই কে, কী খাবে এবং কী পরবে তা নিয়ে মন্তব্য করার।’ বিরোধীরা এই মহিলা সমাজকর্মীকে সমর্থন করেছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।
এদিন তিরথ সিং রাওয়াত বলেন, ‘ছেঁড়া ডেনিম পরছেন, হাঁটু দেখা যাচ্ছে, এই মূল্যবোধই দেওয়া হচ্ছে এখন। কোথা থেকে শেখানো হচ্ছে এসব? স্কুল বা শিক্ষকদের কী ভুল রয়েছে? আমরা ছেলেকে ছেঁড়া জিন্স পরিয়ে কোথায় নিয়ে চলেছি তাকে? মেয়েরাও ছেঁড়া জিন্স পরছে। এটা কি ভালো? সকলে পশ্চিমী দেশগুলির সঙ্গে পাল্লা দিতে দৌড়চ্ছেন। পশ্চিমী দেশগুলির নাগরিকরা গা–ঢাকা পোশাক পরে যোগাসন করে আমাদের অনুসরণ করছেন, আর আমরা খোলামেলা পোশাকের দিকে ঝুঁকছি। এটা বাবা–মা তাঁর সন্তানের কাছে খারাপ উদাহরণ তুলে ধরছে।’
মহিলাদের উন্মুক্ত হাঁটু নিয়ে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, ‘পশ্চিমী দেশগুলি ভারতীয় যোগাসন অনুসরণ করছে, নিজেদের শরীর ঢাকছে, আর আমরা নগ্নতার দিকে ছুটছি। কাঁচি দিয়ে সংস্কারকে কেটে ফেলা হচ্ছে। হাঁটু দেখিয়ে, ছেঁড়া জিন্স পরে বড়লোকদের অনুসরণ করার চেষ্টা চলছে। বর্তমানে এই অভ্যাসগুলিকেই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আমরা ছেলের হাঁটু দেখিয়ে, ছেঁড়া জিন্স পরিয়ে তাঁকে কোন পথে নিয়ে যাচ্ছি? মেয়েরাও কম নয়, তাঁরাও নিজেদের হাঁটু দেখাচ্ছেন। এটা কি ঠিক?’
এই প্রসঙ্গে রাওয়াত আরও জানান, স্বেচ্ছাসেবি সংস্থা চালান, এমন এক মহিলার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। তিনি ছেঁড়া জিন্স পরেছিলেন। সমাজে কী বার্তা দিচ্ছেন ওই মহিলা? এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে ওই মহিলা সমাজকর্মী এবং বিরোধীরা একসুরে বলেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য সংকীর্ণ এবং পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার বহিপ্রকাশ।’ দেরাদুনের সমাজকর্মী হীরা জাংপাঙ্গী বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসা ব্যক্তির এমন মন্তব্যকে স্বাগত জানানো যায় না। কারও অধিকার নেই আর একজন কী পরবে তা নিয়ে কাদা ছোড়ার। এটা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিচয়। উনি বলছেন রিপড জিন্স পরা আমাদের সংস্কৃতি বিরোধী। কিন্তু পুরুষ এবং রাজনীতিবিদদের কী বলবেন, কুর্তা–পাজামা পরা সারা শরীর ঢাকা মহিলাকে যখন তাঁদের দলের নেতা ধর্ষণ করে? আসলে বাড়ি থেকে মহিলাদের বেরোনো বন্ধ করে দিতে চাইছে।’