উত্তরাখণ্ডের চামোলিতে কি আরও বিপদ অপেক্ষা করে আছে? জোরকদমে উদ্ধারকাজের মধ্যেই তেমনই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। ভূতত্ত্ববিদদের অনুমান, হিমবাহ ফেটে ধ্বংসস্তূপ জমে যাওয়ার ফলে হৃষিগঙ্গা নদীর উপর একটি হ্রদ তৈরি হয়েছে। যেখান থেকে জলরাশির স্রোত নেমে আসার ফলে ব্যাহত হতে পারে উদ্ধারকাজ। সেজন্য ইতিমধ্যে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানো হয়েছে।
উপগ্রহচিত্রে সেই হ্রদের উপস্থিতির প্রমাণও মিলেছে। আমদবাদের ‘ফিজিকাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি’-এর অবসরপ্রাপ্ত ভূতত্ত্ববিদ নবীন জুয়েল বলেন, ‘রন্টিগ্যাদ বা রনতি নদী নামে একটি জায়গা আছে। যা হৃষিগঙ্গার সঙ্গে মিশছে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি হিমবাহ ভেঙে যাওয়ার ফলে যে ধ্বংসস্তূপ জমা হয়েছে, তা সেখানে হৃষিগঙ্গার জলকে আটকে রেখেছে। তার ফলে তৈরি হয়েছে একটি হ্রদ।’ সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘হ্রদ টইটুম্বর হওয়ায় সেখান থেকে অবশ্যই জল বেরিয়ে আসবে। আমাদের জানানো হয়েছে যে সেখান থেকে জল নিষ্কাশনের চেষ্টা করা হচ্ছে। হ্রদ ভেঙে পড়বে না। কিন্তু ধীরে ধীরে জলরাশি নেমে আসবে। যা উদ্ধারকারীদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।’
হেমবতী নন্দন বহুগুণা গারওয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ভূতত্ত্ববিদ ওয়াইপি সুন্দরিয়াল জানিয়েছেন, গত বুধবার হ্রদ তৈরি হওয়ার বিষয়টি প্রথম তাঁদের নজরে আসে। দ্রুত জেলা প্রশাসনকে সে বিষয়ে জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছিলাম যে ইন্দো-টিবেটিয়ান বর্ডার পুলিশ (আইটিবিপি) বা অন্য উদ্ধারকারী সংস্থা নিজেরা হ্রদের জল যাওয়ার জায়গা করে দিতে পারে। যাতে ধাপে ধাপে জল এবং ধ্বংসস্তূপ বেরিয়ে আসতে পারে। কারণ একবার তা ভেঙে গেলে ভয়ানক হতে পারে। এখন ভালো বিষয় হল যে বাঁধ থেকে জল বেরনোর প্রক্রিয়ার শুরু হয়েছে। তবে ভেঙে পড়ার ভয় থেকেই যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে উত্তরাখণ্ড সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, ওই এলাকায় আকাশপথে পরিদর্শন করেছেন দেরাদুনের ‘ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ রিমোট সেন্সিং’ বিজ্ঞানীরা। মুখ্যসচিব ওমপ্রকাশকে জানিয়েছেন যে হ্রদ থেকে জল বেরোতে শুরু করে দিয়েছে। তারইমধ্যে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর (এসডিআরএফ) ডিআইজি রিদ্দিম আগরওয়াল জানান, জল নিষ্কাশনের আগে পরিস্থিতির মূল্যায়নের জন্য শুক্রবার ওই হ্রদের এলাকায় একটি দল পাঠানো হয়েছে। সেই দল ফেরার পরই উপযুক্ত তথ্য জানা যাবে বলে জানিয়েছেন রাজ্য পুলিশের ডিআইজি (আইন-শৃঙ্খলা) নীলেশ আনন্দ ভারনে। সেখানে একটি অস্থায়ী হেলিপ্যাড তৈরির কাজও চলছে।