গতকাল রাত থেকে শুরু হয়েছিল 'ম্যানুয়াল ড্রিল'। এর আগেই অবশ্য শুরু হয়েছিল 'ভার্টিকাল ড্রিল'। উত্তরকাশীর টানেলের উদ্ধারকাজে অগার মেশিন খারাপ হওয়ার একই সঙ্গে দু'দিক দিয়ে আটকে পড়া শ্রমিকদের উদ্ধার করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। উল্লেখ্য, গত শনিবার খারাপ হয়ে গিয়েছিল অগার মেশিন। এরপরই উত্তরকাশীর টানেল থেকে ৪১ জন শ্রমিককে উদ্ধার করতে বিকল্প পথে হাঁটেন উদ্ধারকারীরা। এই আবহে আজ সকাল সকাল মাইক্রো টানেলিং বিশষজ্ঞ ক্রিস কুপার বলেন, 'গতকাল রাতে কাজ বেশ ভালো গতিতে কাজ এগিয়েছে। আমরা ৫০ মিটার অতিক্রম করে ফেলেছি ইতিমধ্যেই। এখন আর মাত্র ৫ থেকে ৬ মিটার যেতে হবে আমাদের। গতরাতে আমাদের কোনও সমস্যায় পড়তে হয়নি।' (আরও পড়ুন: শক্তি বাড়াবে সাগরের নিম্নচাপ, তৈরি হবে ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম, পরোক্ষ প্রভাব বাংলায়)
উল্লেখ্য, গতরাতে ১২ জন বিশেষজ্ঞ ও ৬ জয় শ্রমিক শুরু করেন 'ম্যানুয়াল ড্রিল'। এখনও পর্যন্ত ম্যানুয়াল ড্রিল পদ্ধিতে ২ মিটার গর্ত করা সম্ভব হয়েছে। এদিকে ভার্টিকাল ড্রিলের ক্ষেত্রে পাহাড়ের ওপর থেকে খুঁড়তে খুঁড়তে আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছতে পার করতে হত ৮৬ মিটার। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ পথ পার করা গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই আবহে শীঘ্রই শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব অজয় কুমার ভাল্লা, উত্তরাখণ্ডের মুখ্যসচিব এসএস সান্ধু, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব প্রমোদ কুমার মিশ্র গতকাল গিয়েছিলেন টানেলের উদ্ধারকাজ পরিদর্শনে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব প্রমোদ কুমার মিশ্র আটকে থাকা শ্রমিকদের আশ্বাস দিয়ে জানান, তাঁদের শীঘ্রই উদ্ধার করা হবে।
রিপোর্ট জানাচ্ছে, পাহাড়ের ওপর থেকে প্রায় ৩৬ মিটার গভীরে খোঁড়া হয়েছে। এই গতিতে কাজ নির্বিঘ্নে চলতে থাকলে বৃহস্পির মধ্যে তা সম্পন্ন হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে যদি শেষে দেখা যায়, এই পথেও উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হল না, তাহলে? তখন 'ড্রিফট' প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে। এই পন্থায় পাথর কেটে কেটে প্রয়োজন অনুযায়ী মাপে ছোট সুড়ঙ্গ তৈরি করা হয়। সে ক্ষেত্রে ১৭০ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে। এদিকে বিস্ফোরণের কৌশলেও পাহাড়ে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। দৈনিক তিনটি করে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। এই উপায়ে ৪৮৩ মিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হবে উদ্ধারকারী দলকে। এছাড়া বারকোট প্রান্ত থেকে উল্লম্ব ভাবে মাটি খুঁড়ে শ্রমিকদের কাছে পৌঁছনোর চেষ্টা করা হতে পারে। সেই ক্ষেত্রে ২৪ মিটার খুঁড়তে হবে। এর জন্যে আবার পাঁচ কিলোমিটার সড়ক প্রয়োজন। সেই সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে জোর কদমে। এদিকে ম্যানুয়াল ড্রিল তো চলছেই।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ দিন ধরে উত্তরকাশীর টানেলে আটকে রয়েছেন বাংলার ৩ সহ মোট ৪১ জন শ্রমিক। বিগত কয়েকদিনে উদ্ধারকাজে গতি এসেছিল। তবে হিমালয়ের খামখেয়ালিপনার জেরে বারবারই থমকেছে ড্রিলিংয়ের কাজ। এর জেরে এখনও টানেলে বসেই প্রহর গুনতে হচ্ছে ৪১ জন শ্রমিককে। বিগত দিনে দু'বার হিমালয়ের খামখেয়ালিপনায় আটকে যায় উদ্ধারকাজ। গত বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও ফের একবার ড্রিল করতে গিয়ে পাহাড়ে কোনও এক ধাতব বস্তুর মুখোমুখি হতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। এর জেরে ড্রিল মেশিন থমকে যায়। এর আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, আরও ১২ মিটার ড্রিল করলেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সেটুকু পথ পাড়ি দিতেই অনেক বাধার মুখে পড়তে হয় অগার মেশিনকে। এই আবহে অগার মেশিনের সাহায্যে ড্রিল করার বিকল্প থেকে সরে আসে উদ্ধারকারী দল। অথচ গত বুধবার সন্ধ্যা-রাতের দিকে মনে করা হচ্ছিল, যে কোনও মুহূর্তে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এরই মাঝে শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়, অগার মেশিনের সাহায্যে আর ড্রিল করা হবে না।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সিল্কিয়ারা এবং দন্ডলগাওঁয়ের মাঝে তৈরি হচ্ছিল এই টানেলটি। গত ১২ নভেম্বর খুব ভোরে সেই টানেলে ধস নামে। এই গোটা টানেলটি সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা বলে জানা গিয়েছে। তারই মধ্যে ১৫০ মিটার লম্বা এলাকা জুড়ে ধসটা নামে ভোর ৪টে নাগাদ। জানা গিয়েছে, টানেলের সামনের দিক থেকে ভিতরের দিকে প্রায় ১৫০ মিটার জমি ধসে পড়ে ওপর থেকে। অর্থাৎ, টানেলের ছাদ ধসে পড়ে। তাতেই আটকা পড়ে যান শ্রমিকরা। প্রসঙ্গত, ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কটি চারধাম রোড প্রোজেক্টের অংশ। এই সড়ক সারা বছর সব ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই চালু থাকার কথা। এই সড়কটি তৈরি হলে উত্তরকাশী এবং যমুনোত্রীর মধ্যে যারাপথ ২৬ কিলোমিটার কমে আসবে।