দিনটা ছিল ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর। ঘড়ির কাঁটায় তখন ৪ টে ৩১ মিনিট (বাংলাদেশের স্থানীয় সময়)। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করছেন পাকিস্তানের ৯৩,০০০ ফৌজি। ভারতের দাপটে ১৩ দিনের মধ্যেই অস্ত্র নামিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েছে পাকিস্তানি বাহিনী। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার পাশে বসে আত্মসমর্পণের দলিলে সাক্ষর করছেন পাকিস্তানি সেনার ইস্টার্ন কমান্ডের লেফটেন্যান্ট জেনারেল এএকে নিয়াজি।
কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা
সেই ঐতিহাসিক মুহূর্তের আজ ৫৩ বছর পূর্ণ হল। ভারতের হাত ধরে সেদিন স্বাধীনতা লাভের পরে অনেক পট পরিবর্তনের সাক্ষী থেকেছে বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন পালটেছে। আর সেইসবের মধ্যেই 'বিজয় দিবস' উদযাপনের জন্য কলকাতায় এসেছেন বাংলাদেশের ১০ জন প্রতিনিধি (মুক্তিযোদ্ধা ও বাংলাদেশি সেনার অবসরপ্রাপ্ত সদস্য)। আবার ঢাকায় গিয়েছেন ভারতীয় সেনার আটজন প্রাক্তন আধিকারিক। ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁরা কলকাতা এবং ঢাকায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।
ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়
এমনিতে প্রতি বছরই কলকাতা এবং ঢাকায় বিজয় উৎসব উদযাপনের অনুষ্ঠানে সামিল হন দুই দেশের প্রতিনিধিরা। কিন্তু চলতি বছরের ৫ অগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরবর্তী সময় ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্কে যে একটা ধাক্কা লেগেছিল, সেই আবহে দু'দেশের প্রতিনিধি দলের বিজয় দিবসের উৎসবে যোগ দেওয়ার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
সংবাদসংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকার এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন যে ভারতের বিদেশ সচিব বিক্রম মিশ্রির বাংলাদেশ সফরের পরে দু'দেশের সম্পর্কের উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। আর সেটারই প্রতিচ্ছবি ধরা পড়েছে কলকাতা এবং ঢাকায় বিজয় দিবসের উৎসবে দু'দেশের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণের ঘটনায়।
ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর এই দিনটায় ভারত এবং বাংলাদেশের বন্ধুত্বের সম্পর্ক উদযাপন করেন মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধে লড়াই করা আধিকারিকরা। যে দিনটা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকে আরও তাজা করে তোলে। মুক্তিযুদ্ধ ভারত এবং বাংলাদেশের আত্মবলিদানের প্রতীক হয়ে আছে। দুই বাহিনী হাতে হাত মিলিয়ে অত্যাচার, শোষণ এবং ব্যাপক নৃশংসতা থেকে মুক্ত করেছিল বাংলাদেশকে।
আরও কিছুক্ষণ বন্ধ রাখা হোক ‘অ্যাকশন’, আর্জি জানিয়েছিল পাকিস্তান
আর যেদিন সেই বাংলাদেশ মুক্ত হয়েছিল, সেদিনের ঘটনার স্মৃতিচারণ করে ভারতীয় বায়ুসেনার তরফে জানানো হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ন'টা পর্যন্ত সাময়িকভাবে আকাশপথে 'অপারেশন' বন্ধ রাখা হয়েছিল। পাকিস্তানি সেনার আর্জিতে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছিল দুপুর তিনটে। কারণ ভারত-বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের বিষয়ে নিজেদের ফৌজিদের জানানোর জন্য কিছুটা সময় দরকার ছিল পাকিস্তানের সেনা। আর আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করেছিল বিকেল ৪ টে ৩১ মিনিটে। সেইসঙ্গে পূর্ব সীমানায় লড়াইয়ে ইতি পড়ে গিয়েছিল। তবে পশ্চিম সীমান্তে 'অ্যাকশন' জারি ছিল। সেই 'অ্যাকশন' শেষ হয়েছিল ১৭ ডিসেম্বর রাত আটটায়।