গত মঙ্গলবারই সংসদে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দাবি করেছিলেন, বিজয় মালিয়ার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে করে ১৪,১৩১.৬ কোটি টাকা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ককে ফিরিয়েছে ইডি। আর অর্থমন্ত্রীর এই বিবৃতির পরই পালটা দাবি করলেন বিজয় মালিয়া। সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্স-এ একটি পোস্ট করে বিজয় মালিয়া দাবি করলেন, তাঁর সংস্থা কিংফিশার এয়ারলাইন্সের যত টাকা বকেয়া ছিল, তার থেকে বেশি টাকা ইডি বাজেয়াপ্ত করেছে। (আরও পড়ুন: ডোভাল-ওয়াং বৈঠকের পর ভিন্ন বিবৃতি ভারত-চিনের, 'সহমত' হওয়া নিয়ে 'দ্বিমত' দুই দেশ?)
বিজয় মালিয়া এই নিয়ে লেখেন, 'দেনা আদায় ট্রাইবুনাল রায় দিয়েছিল যে কিংফিশার এয়ারলাইন্সের দেনা ৬২০৩ কোটি টাকা। তার মধ্যে ১২০০ কোটি টাকার সুদ যুক্ত ছিল। আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সংসদে বললেন যে ইডির মাধ্যমে ব্যাঙ্কগুলি আমার থেকে ১৪,১৩১.৬ টাকা উদ্ধার করেছে। যদিও রায়ে বলা হয়েছিল আমার সংস্থার দেনার পরিমাণ ৬২০৩ কোটি টাকা। এবং আমি এখনও অর্থনৈতিক অপরাধী। ইডি এবং ব্যাঙ্কগুলিকে আইনত ব্যাখ্যা দিতে হবে যে কীভাবে তাঁরা দেনার পরিমাণের থেকে দ্বিগুণ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। আমি স্বস্তি পাওয়ার যোগ্য। আমি তা পাওয়ার চেষ্টা করব।'
এর আগে 'পলাতক ব্যবসায়ীদের' থেকে টাকা উদ্ধার প্রসঙ্গে সংসদে দাঁড়িয়ে সীতারামন বলেছিলেন, 'আর্থিক প্রতারণা প্রতিরোধী আইনের অধীনে ইডি সফলভাবে সব মিলিয়ে অন্তত ২২,২৮০ কোটি টাকার বেআইনি সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে সমর্থ হয়েছে। বড় মামলাগুলি থেকে এই বিপুল পরিমাণ সম্পদ পুনরুদ্ধার করা হয়েছে। আমরা আর পিছিয়ে নেই। এমনকী তাঁরা (প্রতারণায় অভিযুক্তরা) যদি দেশ ছেড়ে পালিয়েও যান, তাহলেও আমরা তাঁদের ছাড়ব না।' সেই সময়ই নির্মলা জানান, বিজয় মালিয়ার ১৪,১৩১.৬ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে ফেরানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, কিংফিশার এয়ারলাইনস ঋণ জালিয়াতির মামলায় অভিযুক্ত বিজয় মালিয়া। বিগত বছরগুলিতে বিজয় মালিয়াকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করে গিয়েছে ভারত সরকার। তবে তিনি আপাতত লন্ডনে জীবনযাপন করছেন। উল্লেখ্য, বিজয় মালিয়া এক সময় ভারতের অন্যতম সফল ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিংফিশার এয়ারলাইন্সের পাশাপাশি ইউনাইটেড স্পিরিট নামক মদ প্রস্তুতকারী সংস্থা চালাতেন তিনি। আইপিএল-এ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু দল কিনেছিলেন। ভারতীয় ফুটবলের বহু দলেও তাঁর বিনিয়োগ ছিল। পরে ফর্মুলা ওয়ানেও একটি দল কিনেছিলেন বিজয়। তবে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যাঙ্কগুলি থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করার অভিযোগ ছিল। এই আবহে মালিয়ার অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলছে।
এই আবহে ২০২৪ সালেরই জুলাই মাসে মুম্বইয়ের বিশেষ সিবিআই আদালত বিজয়ের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য নয়া পরোয়ানা জারি করে। ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক থেকে ১৮০ কোটি ঋণ নিয়ে শোধ না দেওয়ার অভিযোগে সেই পরোয়ানা জারি হয়েছিল। এছাড়াও আইডিবিআই থেকে ঋণ নিয়ে জালিয়াতি করার মামলায় সিবিআই তাঁর বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে। সেই মামলায় আবার আইডিবিআই ব্যাঙ্কের প্রাক্তন জেনারেল ম্যানেজার বুদ্ধদেব দাশগুপ্তও অভিযুক্ত ছিলেন।