সংবিধান প্রণেতা বাবা সাহেব আম্বেদকরের মূর্তির সামনে রাখা সংবিধানের রেপ্লিকা ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছিল এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কথা ছিল, গণতান্ত্রিক অধিকার ও পন্থা অনুসারেই সেই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদ করা হবে। আর তার জন্যই বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, সেই বনধ চলাকালীনই ছড়াল হিংসা। উত্তপ্ত হয়ে উঠল গোটা এলাকা।
বুধবার এই বনধের ডাক দেওয়া হয়েছিল মহারাষ্ট্রের মারাঠওয়াড়া অঞ্চলের পরভণী জেলায়। অভিযোগ, সেই বনধ চলাকালীনই তাণ্ডব শুরু করে একদল উন্মত্ত জনতা। তারা পাথর ছোড়ে, একের পর একে গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। অশান্তি থামাতে মাঠে নামতে হয় পুলিশকে। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে ফাটাতে হয় কাঁদানে গ্যাসের সেল। পরবর্তীতে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়, যাতে নতুন করে কোনও জমায়েত বা অশান্তি না হয়।
ঘটনার সূত্রপাত হয় মঙ্গলবার বিকেলে। পরভণী তহসিলের মুর্তিজাপুরের বাসিন্দা সোপান পাওয়ারের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠে। সূত্রের দাবি, পরভণীর জেলাশাসকের কার্যালয়ের কাছে ড. আম্বেদকরের একটি মূর্তি রয়েছে। সেই মূর্তির সামনে একটি কাচের বাক্সে রাখা ছিল ভারতীয় সংবিধানের রেপ্লিকা।
অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্য়ায় সেই সংবিধানটি নষ্ট করেন সোপান পাওয়ার। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত লোকজনই সোপানকে পাকড়াও করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
মঙ্গলবারের ওই ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার এলাকায় বনধ ডাকা হয়। সকাল থেকে বেলা পর্যন্ত এই বনধ ছিল শান্তিপূর্ণ। কিন্তু, ঝামেলা শুরু হয় দুপুর ১টা নাগাদ। হঠাৎই মারমুখী কিছু লোক পাথর ছুড়তে শুরু করে। একের পর এক গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়।
হামলাকারীদের বাগে আনতে ঝাঁপিয়ে পড়ে পুলিশ। একের পর এক কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটাতে শুরু করেন পুলিশকর্মীরা। এরই জেরে পরবর্তীতে জেলাশাসক রঘুনাথ গাওয়াড়ে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেন। পাশাপাশি, শান্তি কায়েম করতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
এদিকে, অভিযুক্ত সোপান পাওয়ার কেন হঠাৎ করে সংবিধানের রেপ্লিকা নষ্ট করতে গেলেন, তা নিয়ে শুরু হয়েছে জল্পনা। আনন্দরাজ আম্বেদকরের নেতৃত্বাধীন রিপাবলিকান সেনার সহ-সভাপতি বিজয় ওয়াকোড়ে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।
পাশাপাশি, তাঁর প্রস্তাব এই হামলার নেপথ্য কারণ সঠিকভাবে জানতে সোপান পাওয়ারের নার্কো টেস্ট করা হোক। একইসঙ্গে, এই মামলার শুনানি কোনও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে করানোরও দাবি তুলেছেন তিনি।
বিজয় ওয়াকোড়ে এই প্রসঙ্গে বলেন, 'পুলিশ আসলে এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেই কারণেই সোপান পাওয়ারকে মানসিক রোগী বলে ঘোষণা করে দিয়েছে তারা। এই কারণেই মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। যার জেরে এদিন হিংসা ছড়ায়।...'
'...আমরা মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছি, যাতে তারা শহরে শান্তি বজায় রাখে। পুলিশের উচিত, অভিযুক্তের নার্কো টেস্ট করানোর। আমাদের দলের লোকেরাই তাঁকে ধরেছিলেন এবং পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমাদের তাঁকে দেখে মনে হয়নি, তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ।...'
'...কেউ বা কারা অশান্তি পাকানোর জন্যই তাঁকে পাঠিয়েছিল। তাঁরা আসলে কারা, পুলিশের সেটা খুঁজে বের করা উচিত। আমাদের আরও দাবি, অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। কারণ, তাঁকে ইতিমধ্যেই হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়া হয়েছে।'