কথায় আছে, রাখে হরি মারে কে। তবে ভিয়েতনামে বছর দুইয়ের শিশুকে রেখেছেন এক সাধারণ ডেলিভারি বয়। আর তা ধরাও পড়েছে ভিডিয়োতে।
না, হেঁয়ালি নয়, একটু খোলসা করে বলি। ঘটনাটা রবিবারের। ভিয়েতনামের হানোইতে তখন বিকেল ৫টা। সূর্য ডুবু ডুবু। শহরের এক গগনচুম্বী আবাসনে তখন পরিবেশ মনোরম।
হঠাত্ই তাল কাটল মরিয়া চিত্কারে। দেখা গেল ১৬ তলা আবাসনের ১২ তলার বারান্দার কার্নিসে একটা ফুটফুটে শিশু। বয়স বড়জোড় দুই কী তিন। টলমল পায়ে সে একা একা বারান্দার রেলিং পেরিয়ে কার্নিসে এসে দাঁড়াল।
ব্যাপারটা প্রথমে চোখে পড়ে উল্টো দিকের আবাসনের এক মহিলার। দেখা মাত্রই তিনি অসহায়ভাবে চিত্কার করতে থাকেন। মহিলার চেঁচামেচি শুনে আশেপাশের ফ্ল্যাটগুলি থেকেও সকলে বারান্দায় জড়ো হন। সকলেই তখন ভয়ে, আতঙ্কে চিত্কার করছেন। নিচেও জড়ো হয়ে গিয়েছেন বেশ কিছু মানুষ।
এমন সময়েই দিনের কাজ সেরে সেখান দিয়ে ফিরছিলেন গুয়েন জক মান। গুয়েন একজন ডেলিভারি বয়। বয়স ৩১। চেঁচামেচি শুনেই বারান্দার ঠিক তলাটা লক্ষ্য করে ছুটতে থাকেন।
"আমি প্রথমে ভেবেছিলাম কোনও বাচ্চা দুষ্টুমি করছে। পরে বুঝলাম ব্যাপারটা গুরুতর। তাই আর দেরি করিনি," সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে তখনও হাত কাঁপছে গুয়েনের। "সরাসরি নিচে একটা জেনারেটরের শেড ছিল, উঠে পড়লাম তার উপরেই," হাসিমুখে বললেন গুয়েন।
জেনারেটরের নড়বড়ে শেডের উপর দাঁড়িয়েই উপর দিকে তাকিয়ে শিশুটিকে ক্যাচ নেওয়ার জন্য তৈরি হয়ে যায় গুয়েন। আর তার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে শিশুটি পড়ে যায় ১২ তলার ব্যালকনির কার্নিশ থেকে।
আবাসন জুড়ে তখন তুমুল অসহার আর্তনাদ। তবে তারই মধ্যে মাথা ঠান্ডা রেথে হাত বাড়িয়ে দেন যুবক। সোজা কোলের মধ্যে এসে পড়ে শিশুটি।
"আমার লক্ষ্য ছিল যেন লুফে নিতে না পারলেও শিশুটি যেন সোজা মাটিতে আছাড় না খায়। ভাগ্যবশত সে আমার কোলেই এসে পড়ে," জানান গুয়েন। তবে শিশুটির নাক থেকে রক্ত বের হতে দেখে তিনি বেশ ঘাবড়ে যান।
এরপরেই শিশুটিকে সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার হিপ ডিসলোকেশান হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিত্সকরা। যদিও আপাতত সে বিপদমুক্ত।
যুবকেরও হালকা চোট লেগেছে শিশুটিকে ধরতে গিয়ে। তবে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ তিনি। শিশুটিকে রক্ষা করতে পেরেই তিনি ভীষণই আনন্দিত।
গোটা ঘটনাটা ধরা পড়েছে উল্টোদিকের বিল্ডিংয়ের এক মহিলার মোবাইল ও নিচের একটি সিসিটিভি ক্যামেরায়। দেখুন সেই ভাইরাল ভিডিয়ো।
আসলে আমাদের সবার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে গুয়েনের মতো একজন সুপারহিরো। খালি সঠিক সময়ে তাকে বের করে আনতে হয়।