ফের বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। আবারও একবার তাদের বিরুদ্ধে কবিগুরুর আদর্শের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার অভিযোগ উঠল। ফের উঠল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গৈরিকীকরণ ঘটানোর অপচেষ্টার অভিযোগ।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, এই নয়া বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছেন একটি অনুষ্ঠান। গত শনিবার ও রবিবার - দু'দিনব্যাপী সেই অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের উৎসাহ প্রদান।
অথচ, সেই অনুষ্ঠানে সেই বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদেরই আমন্ত্রণ জানানো হল না। শুধু তাই নয়। অভিযোগ, যে অধ্যাপিকার বিরুদ্ধে মামলা চলছে এবং যাঁর বিরুদ্ধে বিশেষভাবে সক্ষম পড়ুয়াদের হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে, সেই সরিতা আনন্দকেই কিনা দেওয়া হল অনুষ্ঠান আয়োজনের সব দায়িত্ব!
এখানেই শেষ নয়। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রাহ্ম ছিলেন। তাই, তাঁদের হাতে গড়া শান্তিনিকেতনে কোনও মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয় না। এবং সেখানে কোনও ধর্ম বা সম্প্রদায়ের জন্য নির্ধারিত কোনও ধরনের সাধন-ভজনও হয় না।
কিন্তু, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্বয়ং কবিগুরুর আদর্শকেই তুড়ি মেড়ে উড়িয়ে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। শনি ও রবিবারের অনুষ্ঠানে কবিগুরুর গান গাওয়া হলেও তা ছিল আদতে রবীন্দ্র সঙ্গীতের রিমিক্স! যা বিশ্বভারতী চত্বরে আয়োজিত কোনও অনুষ্ঠানে আগে কোনও দিন উপস্থাপিত করা হয়নি।
বিশ্বভারতীর ঐতিহ্যহানির তালিকা এখানেই শেষ হয়নি। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে তাঁদেরই ব্রাত্য রেখে আমন্ত্রিত অন্যদের সামনে হিন্দিতে পরিবেশন করা হল রামের ভজন ও অযোধ্যার কাহিনি। যা একেবারেই বিশ্বভারতীর প্রথা এবং ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতির বিরুদ্ধ!
স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনা চাউর হতেই নানা মহলে প্রতিবাদ ও সমালোচনা শুরু হয়েছে। বিশ্বভারতীর বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পড়ুয়ারা এই ঘটনার ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। এমনকী, এক ছাত্র এ নিয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে ইমেল মারফত লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন বলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ।
বিশ্বভারতীর বর্তমান এবং প্রাক্তন পড়ুয়া ও শান্তিনিকেতনের আবাসিকরা এই ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। তাঁদের বক্তব্য হল - বিশ্বভারতীতেই যদি রিমিক্সের নামে বিকৃত রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়, তাহলে বাকিদের কাছে কী বার্তা যাবে!
তাঁদের আরও বক্তব্য, যে কবিগুরু জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে রাখী বন্ধনের মতো কর্মসূচি পালন করেছিলেন, তাঁর হাতে গড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেভাবে জোর করে গৈরিকীকরণ ঘটানোর চেষ্টা চলছে, তা মেনে নেওয়া যায় না।
সূত্রের দাবি, বিষয়টি নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরফে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।