গুমনামি বাবাই কি নেতাজি? বহুদিন ধরেই এই প্রশ্ন বাঙালি তথা ভারতীয়দের মনে ঘুরপাক খাচ্ছে। হালফিলে গুমনামি নামের ছায়াছবি আসার পর এই নিয়ে কৌতুহল আরও বেড়েছে। এবার সেই প্রশ্নের উত্তর দিল অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বিষ্ণু সহাই কমিশন। সহাই কমিশন বলেছে যে ভগবানজী বা গুমনামি বাবা নেতাজির ভক্ত ছিলেন। কিন্তু তিনি নেতাজি ছিলেন না। তবে তাঁর গলার স্বরের সঙ্গে মিল ছিল নেতাজির।
১৯৮৫ সালে অযোধ্যার গুপ্তার ঘাটে দাহ করা হয় গুমনামি বাবাকে।বিচারপতি সহায়ের রিপোর্ট বৃহস্পতিবার উত্তরপ্রদেশ বিধানসভায় পেশ করা হয়। হিন্দিতে লেখা ১৩০ পাতার এই রিপোর্টের শেষে বলা হয়েছে যে ভগবানজীর ঘর থেকে যেসব জিনিস উদ্ধার করা হয়েছে, তার থেকে এটা বলা যায় না যে গুমনামি বাবাই নেতাজি। তবে গুমনামি বাবা যে নেতাজির ভক্ত ছিলেন, সেটি জানিয়েছে কমিশন। কিন্তু মানুষ তাঁকে নেতাজি মনে করায় বারবার বাড়ি বদলাতে হয়েছিল গুমনামি বাবাকে, সেটা কমিশনের রিপোর্টে উঠে এসেছে।
গুমনামি বাবা বাঙালি ছিলেন বলে জানিয়েছে কমিশন। বাংলা, হিন্দি ও ইংলিশ, তিন ভাষাতেই তিনি দক্ষ ছিলেন বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। তাঁর গলার স্বরের সঙ্গে নেতাজির কণ্ঠস্বরের মিল ছিল। একই সঙ্গে তিনিও সঙ্গীত ও সিগারের ভক্ত ছিলেন। রাজনীতি সম্বন্ধেও গভীর জ্ঞান ছিল তাঁর।
২০১৬ সালের ২৮ জুন গঠিত হয়েছিল এক সদস্যের কমিশন। ২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর রিপোর্ট পেশ করে কমিশন। এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশেই এই কমিশন গঠিত হয়েছিল। বিচারপতি সহাই বলেন যে অযোধ্যার জেলাশাসকের ট্রেজারিতে যে সব কাগজপত্র জমা আছে গুমনামি বাবাকে নিয়ে, সেগুলিকে খতিয়ে দেখেন তিনি। সেগুলি দেখেই তিনি নিশ্চিত হন যে গুমনামি বাবা নেতাজি নন।
গুমনামি বাবা তাঁর ভক্তদের সঙ্গে দেখা করতেন না। পর্দার আড়ালে থাকতেন। এটিকে অনবদ্য মনের শক্তির নিদর্শন বলে মনে করেছেন বিচারপতি সহাই। গুমনামি বাবা অত্যন্ত গুনী মানুষ ছিলেন এবং তাঁর কথায় মোহিত হয়ে যেতেন শ্রোতারা। তবে গুমনামী বাবা যে ভাবে নিজের পরিচয় কাউকে দিতে চাইতেন না, তাতে কোনও অন্যায় দেখেনি কমিশন। সংবিধানের আর্টিকাল ২১ তাঁকে সেই স্বাধীনতা দিয়েছিল বলেই অভিমত কমিশনের।
যারা মনে করেন গুমনামি বাবা নেতাজি এবং যারা সেই তত্ত্বকে উড়িয়ে দেন, দুই পক্ষের মতকেই রিপোর্টে স্থান দিয়েছেন বিচারপতি। কিন্তু সবকিছু বিচার করে গুমনামি বাবা নেতাজি, সেটা বলা যাবে না বলেই রায় কমিশনের। কিন্তু যেভাবে গুমনামি বাবার মৃত্যুতে কেবল ১৩জন এসেছিলেন তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে, সেটি অত্যন্ত খারাপ বলে মনে করেছে কমিশন। কমিশনের মতে গুমলামি বাবার মতো প্রতিভাবান মানুষকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অনেক বেশি লোকের আসা উচিত ছিল।