বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে আশ্রয় দেওয়া একটি চক্রের পর্দাফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ। এ নিয়ে আট প্রতারকসহ একাধিক বাংলাদেশি সহ ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের তদন্তকারী দলটি। ধৃত অভিযুক্তরা বাংলাদেশিদের আশ্রয় ও চাকরি দিত এবং ভুয়ো কাগজপত্র তৈরিতে সাহায্য করত। ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান জানিয়েছেন, এই ঘটনায় ধৃত অন্যতম মূলচক্রী মইনুদ্দিন নিজামুদ্দিনে থাকেন। আমির খুসরো নগরে তাঁর একটি সাইবার ক্যাফে রয়েছে। অভিযুক্তরা ফটোশপের মাধ্যমে অবৈধভাবে এ দেশে আসা বাংলাদেশিদের জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড, জন্মের শংসাপত্র এবং অন্যান্য নথি তৈরি করে দিত। (আরও পড়ুন: আওয়ামি লিগ নিয়ে সেনার গোপন বৈঠকের কথা সামনে, হাসনাতের পাশে নেই তাঁরই দল?)
আরও পড়ুন: 'হাস্যকর, অবিশ্বাস্য…', নগদ উদ্ধারকাণ্ডে মুখ খুললেন দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশিসহ অবৈধ আশ্রয়কেন্দ্রের একটি চক্রের সন্ধান পেয়ে অভিযান চালিয়েছিল দিল্লির দক্ষিণ জেলার পুলিশ। ধৃত প্রতারকরা ফটোশপ ও এডিটিং টুলের সাহায্যে ভুয়ো কাগজপত্র তৈরি থেকে শুরু করে চাকরি পাওয়া পর্যন্ত কাজ করত। ধৃতদের কাছ থেকে ২৩টি ভোটার আইডি কার্ড, ১৯টি প্যান কার্ড, ১৭টি আধার কার্ড, একটি সিপিইউ, ১১টি বার্থ সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য নথি উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযুক্তরা ইউপিআই অ্যাপের মাধ্যমে সীমান্তের দালালদের টাকা পাঠাত। এর পরে এজেন্টরা দিল্লিতে অবৈধভাবে বসবাসকারী বাংলাদেশিদের পরিবারের কাছে টাকা পাঠাত। (আরও পড়ুন: মোদী-ইউনুস বৈঠক নিয়ে বাংলাদেশের অনুরোধ নিয়ে কী ভাবছে ভারত, জানালেন জয়শংকর)
আরও পড়ুন: 'নগ্ন... নোংরা...', বাংলাদেশ সেনাকে নিয়ে বোমা ফাটালেন 'বিপ্লবী' NCP নেতা
ডিসিপি অঙ্কিত চৌহান বলেন, নিজামুদ্দিনের বাসিন্দা মহম্মদ মইনুদ্দিন এই গ্যাংয়ের নেতা। অবৈধভাবে দেশে আসা বাংলাদেশিদের জাল আধার কার্ড, প্যান কার্ড, বার্থ সার্টিফিকেট এবং অন্যান্য জাল নথি তৈরি করত সে। ফটোশপ ও এডিটিং টুলের সাহায্যে এই কাজ করা হত। অভিযুক্ত ইউআইডিএআই নিবন্ধিত আধার এজেন্ট জুলফিকার আনসারি, জাভেদ এবং উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের বাসিন্দা ফরমান খানের সহযোগিতায় এই চক্রটি পরিচালনা করছিল। এ ছাড়া নিজামুদ্দিন বস্তির বাসিন্দা মহম্মদ শাহিন দিল্লিতে বাংলাদেশিদের ডেলিভারি ও সাফাইয়ের কাজ দিতেন। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বাসিন্দা নিজামুদ্দিনের বাসিন্দা মনোয়ার হোসেন, নিমাই কর্মকার ও গৌরাঙ্গ দত্ত দিল্লি থেকে বেআইনি টাকা বাংলাদেশে পাঠাতেন। মনোয়ার হজরত নিজামুদ্দিন দরগায় কাজ করতেন এবং নিমাই ও গৌরাঙ্গা ফরেক্স এজেন্ট ছিলেন। (আরও পড়ুন: 'ইউনুস বনাম ওয়াকার'-এর মধ্যে বাংলাদেশি সেনাপ্রধানকে সরানো নিয়ে মুখ খুললেন সারজিস)
এদিকে ধৃত বাংলাদেশিদের মধ্যে ভোগাল এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ জুয়েল ইসলাম ও তার বড় ভাই মহাম্মদ আলমগির দিল্লিতে এসে স্ক্র্যাপ ডিলার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আলমগির ২০০৭ সালে একজন ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে করেছিলেন এবং তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। ২০২১ সালে ভারতে এসেছিল জুয়েল ইসলাম। অন্যান্য ধৃতরা হলেন লতিফ খান, মহম্মদ মিজানুর রহমান ও রবিউল। তারা কোটলা মোবারকপুরের বাসিন্দা। এই তিন জনেরই পরিবার বাংলাদেশে বসবাস করে। লতিফের ভাই নাদিম শেখ ২০২১ সালে সাফাইকর্মী হিসাবে কাজ করতে দিল্লি চলে আসেন।
এদিকে ভালসোয়া ডেয়ারির জেজে কলোনিতে অবৈধভাবে বসবাস করা মহম্মদ রিজাউল ২০০০ সালে এখানে এসে এক ভারতীয় মহিলাকে বিয়ে করেন এবং ক্যাব চালক হিসাবে কাজ শুরু করেন। তিনি কোনওরকমে ভারতীয় পাসপোর্ট জোগাড় করতে সক্ষম হন এবং এর পরে তিনি ক্রমাগত দিল্লি থেকে বাংলাদেশে যাতায়াত শুরু করেন। তিনি দিল্লি থেকে টাকা নিয়ে বাংলাদেশে বসবাসকারী অন্য অভিযুক্তদের পরিবারের কাছে পাঠাতেন। গত দুই বছরে তিনি ২২ বার ভারত থেকে নেপাল ভ্রমণ করেছেন। এই মামলায় আরও এক অভিযুক্ত কামরুজ্জামান ২০১৪ সালে দিল্লিতে এসে ডেলিভারি বয়ের কাজ শুরু করেন। আলমগির, লতিফ ও কামরুজ্জামানের ভারতীয় আধার কার্ড ও প্যান কার্ড রয়েছে।
দিল্লিতে বসবাস ও কাজ করা অভিযুক্তরা ভুয়ো নথি দিয়ে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা দিত। এরপর এজেন্টদের নির্দেশে ইউপিআইয়ের মাধ্যমে সীমান্ত এলাকার এজেন্টের কাছে অনলাইনে টাকা পাঠানো হত। সেখানে টাকা পাওয়ার পর সীমান্তের এজেন্টরা হাওয়ালার মাধ্যমে বাংলাদেশে আসামিদের পরিবারকে বাংলাদেশি মুদ্রায় অর্থ সরবরাহ করত। ধৃতদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র, জালিয়াতি, বেআইনি অনুপ্রবেশ, বেআইনি বাসস্থান এবং ভুয়ো পরিচয়ের অপব্যবহারের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। পুলিশ এই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে এবং অন্যান্য কর্মী এবং তাদের গ্যাংয়ের সদস্যদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা করছে।