শিল্পসম্মেলনের ঠিক পরদিন শিল্পগোষ্ঠীগুলির সঙ্গে সচিব স্তরের মুখোমুখি বৈঠকগুলি শুরু করিয়ে দিয়ে লন্ডনের রাজপথে হাঁটতে বের হলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। নানা গল্প হচ্ছে তখন দু’জনের মধ্যে। তারপরই এসে পড়লেন মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির সামনে। সেখানে জাতির জনককে শ্রদ্ধা জানিয়ে বিগ বেন, টেমস হয়ে পরিক্রমা। ফিরে আবার মিটিং ফলো আপ বৈঠক করেন। তবে এই সফরের মধ্যে একটা ক্লাইম্যাক্স ধরা পড়েছে।
এদিন পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে এসে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার সঙ্গে হাত জোড় করে তাঁর প্রার্থনা, ‘বাপুজি, সংবিধানকে বাঁচিয়ে রেখো, রক্ষা কোরো’। তবে প্রথমে ফুল ছিল না মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তাই মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তারক্ষী কুসুমকুমার দ্বিবেদী গান্ধীমূর্তির পাশের ছোট্ট বাগান থেকে কয়েকটি ফুল তুলে আনেন হাত বাড়িয়ে। আর পায়ের চটি খুলে মূর্তির পাদদেশে সেই ফুল অর্পণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরে ওখানে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘বাপু সংবিধানটাকে রক্ষা কোরো!’ মোদী সরকারের জমানায় ভারতের গণতন্ত্র বিপন্ন হয়ে উঠেছে বলে প্রায়ই অভিযোগ করেন বিরোধীরা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আন্তর্জাতিক মহলও তা নিয়ে আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লন্ডনে ‘জাতির জনক’কে শ্রদ্ধা জানিয়ে সংবিধান রক্ষার প্রার্থনা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
আরও পড়ুন: কেন্দ্রের জমি থেকে উচ্ছেদ অভিযান ঘিরে ধুন্ধুমার দুর্গাপুরে, পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বাসিন্দাদের
এভাবেও যে মোদী সরকারকে খোঁচা দেওয়া যায় সেটা নাম না করে দেখিয়ে দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। যা অনেকেই ক্যামেরাবন্দি করলেন। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসেছেন। বৃহস্পতিবার তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যাবেন অক্সফোর্ডের কেলগ কলেজে। তার আগে মুখ্যমন্ত্রীর হোটেলে এসে দেখা করে গেলেন সৌরভের পত্নী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর নাচের দলের সদস্যরাও। আগামী সপ্তাহে লন্ডনে নাচের অনুষ্ঠান আছে ডোনাদের। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতেই ডোনা পেলেন সোয়েটার উপহার। মুখ্যমন্ত্রী বললেন, ‘ভাবলাম ওকে কিছু একটা দিই। কিন্তু এত কম সময়ে কী পাব? ঠান্ডার জন্য একটা নতুন সোয়েটার ওকে দিলাম।’
বাংলার মুখ্যমন্ত্রী গান্ধীমন্ত্রে বিশ্বাসী। বারবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বধর্ম সমন্বয়ের কথা বলেছেন। যা সংবিধানে বলা আছে। আর এই সংবিধানই লঙ্ঘন করছেন বিজেপি নেতা মন্ত্রীরা বলে তাঁর অভিযোগ। তাই গান্ধীজিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে তাঁর মন্তব্য বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। এরপর সেন্ট জেমস কোর্ট হোটেলে শিল্প সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা দুপুর ২টোয়। ১০ মিনিট আগেই পৌঁছে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মুখ্যমন্ত্রী বলে উঠলেন, ‘এখনও চার মিনিট বাকি কিন্তু।’