পাহাড় থেকে সমতল তিনি হাঁটতে ভালবাসেন। খুব জোরে হাঁটেন। আর হাঁটার সময় কথাও বলেন। প্রকৃতির কোলে নিজেকে মেলে ধরেন। দাঁড়িয়ে দেখেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং পরে তা তুলে ধরেন নিজের ক্যানভাসে। বিদেশের মাটিতেও সেই চেনা ছন্দে তিনি। হ্যাঁ, তিনি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যিনি একটানা মাইলের পর মাইল হাঁটতে পারেন। তাই তো লন্ডন সফরে ব্যস্ত দিনলিপির মধ্যেও হেঁটে চলেছেন। জগিং করেছেন। ঠাসা কর্মসূচি থাকা সত্ত্বেও প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়েছেন তিনি। একেবারে চেনা ছন্দে লন্ডনের রাজপথে সঙ্গীদের নিয়ে হাঁটলেন তিনি। বুধবার টেমসের তীরে হাঁটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এখানেই দেখা হয়ে যায় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘরণী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ করার পাশাপাশি তিনিও একসঙ্গে হাঁটেন। তাঁদের ফ্ল্যাট কোথায় জানতে চান বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। লন্ডনে ফ্ল্যাট দেখানোর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ডোনাকে বলেন, ‘আর হাঁটবে?’ প্রশ্ন শুনে ডোনা চমকে উঠলেও না বলতে পারেননি। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে টানা হাঁটা সকলের পক্ষে সম্ভব নয়। ডোনা অবশ্য তেমন কাজের চাপ না থাকায় হাঁটার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। তবে এই হাঁটার পর নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এক্স হ্যান্ডেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘আমি সবসময় বিশ্বাস করি যে, কোনও জায়গাকে সত্যিকার অর্থে অনুভব করার সর্বোত্তম উপায় হল হেঁটে যাওয়া, গাড়ির জানালার আড়াল থেকে দেখা নয়। এটি আপনাকে স্পষ্টতার বাইরেও দেখতে, মানুষ, রাস্তা এবং তাদের রূপদানকারী ইতিহাসের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে সাহায্য করে।’
এদিন হেঁটে টেমসের ধারে ঘোরেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে পার্লামেন্ট স্কোয়ারে গান্ধীমূর্তির পাদদেশে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। বুধবার বাংলা ও ব্রিটেনের মধ্যে সরকারি স্তরে বাণিজ্য বৈঠক হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী পথে হাঁটা নিয়ে নিজের অনুভব ব্যক্ত করতে লিখেছেন, ‘প্রতিটি ভ্রমণের সাথে সাথে, লন্ডন আরও পরিচিত হয়ে উঠেছে। এর পাথরের তৈরি পথগুলি শতাব্দীর অতীতের গল্পগুলিকে ফিসফিস করে বলে। ব্যস্ত সময়সূচীর মাঝে, আমি এর প্রাঙ্গণে হেঁটে বেড়ানোর, পথচারীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করার, এর ল্যান্ডমার্কগুলির প্রশংসা করার জন্য বিরতি নেওয়ার এবং ইতিহাস দ্বারা গঠিত ও রূপায়িত একটি শহরের স্থায়ী আকর্ষণে ডুবে যাওয়ার সময় খুঁজে পেয়েছি।’
আরও পড়ুন: ‘বাপু, সংবিধানটাকে রক্ষা কোরো’, সৌরভ ঘরণীকে সামনে রেখে কেন্দ্রকে খোঁচা মমতার
এছাড়া হাঁটতে হাঁটতে বিগ বেনের সামনে এসে গেলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরে টেমসের পার ধরে তিনি হাঁটতে থাকলেন। মাঝে একটা পার্ক পেয়ে একটু দৌড়েও নেন। আর একটু ব্যাক ওয়াক। কিন্তু বিগ বেন তো বিগ বেনই। বিগ বেন, সেন্ট জেমস পার্ক, ক্যাভালরি মিউজিয়াম, বাকিংহাম প্যালেস ঘোরেন। যেখানেই যান, ভারতীয়রা চিনে ফেলেন আর ছবি তোলার অনুরোধ করেন। একটা সময় তো আঁচল দিয়ে মুখই ঢেকে নিলেন। যাতে লোকে চিনতে না পারে। আর শেষে মুখ্যমন্ত্রী এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, ‘মিশেল ডি সার্টো একবার লিখেছিলেন যে হাঁটা হল লেখকত্বের একটি কাজ, শহরের কাঠামোতে নিজেকে প্রবেশ করার একটি উপায়। লন্ডনের কালজয়ী রাস্তাগুলির মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময়, আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে প্রতিটি যাত্রা কেবল আমরা কোথায় যাই তা নয়, বরং আমরা কীভাবে আমাদের চারপাশের বিশ্বকে অনুভব করতে পছন্দ করি তা নিয়ে।’