আগামী ৫০ বছর কীভাবে কাটাবেন, বাড়ি তৈরি করবেন, সন্তানের বাবা-মা হবেন- সেইসব বিষয় নিয়ে ১৮ জুলাই অনেকক্ষণ কথা হয়েছিল। কিন্তু পরদিন সকালে উঠেই খবরটা পান যে ভারতীয় সেনার মেডিক্যাল কোরের ক্যাপ্টেন অংশুমান সিং আর নেই। প্রথমে বিশ্বাস হয়নি। দীর্ঘ আট বছরের প্রেমের পরে ফেব্রুয়ারিতে যখন বিয়ে করেছিলেন, তখন থেকে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেটা যে এরকমভাবে ভেঙে যাবে, তা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না স্মৃতি সিং। তারপর থেকে অনেকবার ভেবেছেন যে খবরটা ভুল নয় তো! যা যা হয়েছে, সেগুলো ভুল ছিল না তো! কিন্তু শুক্রবার যখন রাষ্ট্রপতি ভবনে স্মৃতি এবং ক্যাপ্টেন অংশুমানের মায়ের হাতে কীর্তিচক্র তুলে দেওয়ার পরে যেন মনে হচ্ছে যে ‘ভুল’-টা আর ভাঙবে না।
‘লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট’
স্মৃতি বলেন, 'কলেজের ফার্স্ট ইয়ারে আমাদের দেখা হয়েছিল। আমি নাটকীয়ভাবে বলছি না। কিন্তু সত্যিই প্রথম দেখায় প্রেম হয়ে গিয়েছিল। এক মাস পরে ও আর্মড ফোর্সেস মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ পেয়ে গিয়েছিল। আমাদের দেখা হয়েছিল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। আর ও মেডিক্যাল কলেজে সুযোগ গিয়েছিল। মারাত্মক বুদ্ধিমান ছেলে। সেই এক মাসের সাক্ষাৎ-পর্বের পরে আট-আটটা বছর আমরা লং-ডিসট্যান্স রিলেশনশিপে ছিলাম।'
'১৮ জুলাই পরের ৫০ বছরের প্ল্যান করলাম, বাচ্চার কথাও ভাবলাম'
স্মৃতি বলেন, '(তারপর একদিন কথা হল) এবার বিয়ে করে নিই আমরা। সেইমতো বিয়ে করে নিলাম আমরা। দুর্ভাগ্যজনকভাবে বিয়ের দু'মাসের মধ্যে ওকে সিয়াচেনে পোস্টিংয়ে যেতে হয়েছিল। আগামী ৫০ বছর আমাদের জীবন কেমনভাবে কাটবে, তা নিয়ে (২০২৩ সালের) ১৮ জুলাই দীর্ঘক্ষণ কথা হয়েছিল। আমরা বাড়ি তৈরি করব। আমাদের সন্তান হবে।'
'প্রথম ৭-৮ ঘণ্টা খবরটা বিশ্বাস করতে পারিনি'
প্রয়াত ক্যাপ্টেন অংশুমানের স্ত্রী বলেন, ‘১৯ জুলাই সকালে ঘুম থেকে ওঠার পরে আমার কাছে ফোন আসে যে ও আর নেই। প্রথম সাত-আট ঘণ্টা আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে এরকম কিছু হয়েছে। তারপর আমরা নিশ্চিত হই যে ও আর নেই। তখন থেকে আমরা সেই সেটার সঙ্গে ধাতস্থ হওয়ার চেষ্টা করতাম।’
'৩ সেনা পরিবারকে বাঁচাতে ও জীবন উৎসর্গ করল', গর্বিত স্মৃতি
স্মৃতি বলেন, ‘এখনও মনে হত, ওই খবরটা হয়ত সত্যি নয়। কিন্তু এখন কীর্তিচক্র হাতে পাওয়ায় মনে হচ্ছে যে খবরটা সত্যি। ঠিক আছে। ও একজন হিরো। আমরা কিছুটা আমাদের জীবনটা সামলে নেওয়ার চেষ্টা করব। ও অনেকটা করেছিল। ও অনেক কিছু সামলেছিল। ভারতীয় সেনার তিনজন পরিবারকে বাঁচানোর জন্য ও নিজের জীবন উৎসর্গ করে দিয়েছে।’