নিজভূমেই কার্যত পরবাসী হয়ে গিয়েছিলেন অসমের কাছার জেলার বাসিন্দা শেফালি রানি দাস। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে তাঁকে বিদেশি আখ্যা দেওয়া হয়েছিল। এরপর শুরু হয় নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করার লড়াই। চার বছর ধরে মামলা চলে। জীবনের সব সঞ্চয় শেষ। ছাড়খাড় হয়ে গিয়েছে সংসার। এরপর চলতি বছরের ১৭ই জানুয়ারি গুয়াহাটি আদালত তাঁরে ভারতীয় হিসাবে ঘোষণা করে। কিন্তু তারপরেও আতঙ্ক কাটছে না তাঁর। তাঁর একটাই প্রশ্ন, যন্ত্রণা কি শেষ হয়েছে নাকি নতুন কোনও পর্ব শুরু হবে?
তিনি বলেন, উকিল একটা কাগজ হাতে দিয়ে বলেছিলেন, আপনি ভারতীয় নাগরিক। কিন্তু আমার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। খবরের কাগজেও আমার ছবি বেরিয়েছিল। তখন ভাবছিলাম কিছু হয়তো হয়েছে। কিন্তু আজও যখন বাড়ির সামনে দিয়ে পুলিশ যায় ভয় লাগে।
তাঁকে বিদেশি হিসাবে ঘোষণা করার পরে ভয়াবহ যন্ত্রণার মধ্য়ে প্রতিটি দিন কাটিয়েছিলেন তিনি। শেফালি বলেন, সবাই কেমন সন্দেহের চোখে দেখত। সারাদিন লুকিয়ে থাকতাম। অন্যের বাড়িতে বাসন মাজতাম। সামাজিক জীবন ছাড়খার হয়ে গিয়েছে।
যখন মামলা শুরু হয়েছিল তখন বড় ছেলে ক্লাস টেনে পড়ত। এদিকে মামলার টাকা জোগাড়ের জন্য পড়াশোনা ছেড়়ে তাকে ইটভাটায় কাজ নিতে হয়। ইট তুলতে তুলতে হাত ক্ষতবিক্ষত হয়ে গিয়েছিল ছেলের। মাঝেমধ্যে মনে হত আত্মহত্যা করি। নিজেকে ভারতীয় প্রমাণ করতে নানা কাগজ জোগাড় করতে হয় তাঁকে। সমস্ত সঞ্চয় খরচ করার পরে আজ তিনি ভারতীয় হিসাবে আখ্যা পেয়েছেন। তবু সেই ভয়াবহ আতঙ্ক কাটছে না কিছুতেই। তাঁর একটাই প্রশ্ন কেন এই ভয়াবহ যন্ত্রণা পেতে হল আমাকে?