বঙ্গোপসাগরের কোকো আইল্যান্ডে চিনের কোনও অস্তিত্ব নেই। এমনটাই জানিয়ে ভারতকে আশ্বস্ত করল মায়ানমার। ২০২৩ সালে খবরে আসে, ভারত মহাসাগরকে বাগে আনতে সু চি-র দেশে ঘাঁটি বানাচ্ছে শি জিনপিং-র দেশ। তারপর থেকেই উদ্বেগ বাড়ে ভারতের। মায়ানমারের ছোট্ট একটা দ্বীপ কোকো আইল্যান্ড। ভারতীয় ইস্ট কোস্ট থেকে মায়ানমারের দূরত্ব ১২০০ কিলোমিটারের মতো। কিন্তু আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ থেকে কোকো আইল্যান্ডের ব্যবধান মাত্র ৪২ থেকে ৫৫ কিলোমিটার।
জানা যায়, প্রায় দুবছর ধরে এই কোকো আইল্যান্ডে চিনের সামরিক তৎপরতা চলছে। বানানো হচ্ছে রাস্তা, বায়ুসেনা ঘাঁটি, রেডার স্টেশনও। এমনকী ম্যাক্সার টেকনোলজির উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছিল কোকো দ্বীপে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করছে চিন। কিন্তু 'হিন্দুস্তান টাইমস' জানতে পেরেছে, গত মাসে মায়ানমারের জুন্টা সরকার ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিংকে জানিয়েছে, একজনও চিনা নাগরিক কোকো আইল্যান্ডে নেই। রাজেশ কুমার সিং ২৫-২৭ সেপ্টেম্বর মায়ানমারের সশস্ত্র বাহিনীর প্রশিক্ষণ প্রধান মেজর জেনারেল কিয়াও কো হ্টিকের সঙ্গে বৈঠক করেন। তবে সূত্রের খবর, প্রাতিষ্ঠানিক কূটনৈতিক ও সামরিক চ্যানেলের মাধ্যমে আবেদন করা সত্ত্বেও জুন্টা সরকার এখনও ভারতীয় নৌবাহিনীকে কোকো আইল্যান্ড পরিদর্শনের অনুমতি দেয়নি। তারা ভারতীয় নৌবাহিনীর আহ্বানে এখনও পর্যন্ত কোনও সাড়া দেয়নি।
আরও পড়ুন-নোবেল আশায় জল! কৃতিত্বের জন্য পূর্বসূরী ওবামাকে দুষলেন ট্রাম্প, বিশ্ব রাজনীতিতে উলটপুরাণ
ভারত নিয়ন্ত্রিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের একেবারেই কোলঘেঁষে অবস্থান কোকো আইল্যান্ডের।কোকো দ্বীপ বর্তমানে ভূরাজনৈতিক কৌশলগত দিক থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই দ্বীপগুলি তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগরের মিলনস্থলে। কোকো আইল্যান্ড মায়ানমারের ইয়াঙ্গুন প্রশাসনিক অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। পাঁচটি দ্বীপ নিয়ে তৈরি। এর মধ্যে চারটি দ্বীপ অবস্থিত গ্রেট কোকো রিফের ওপর। বহুদিন থেকে এই কোকো দ্বীপপুঞ্জে ঘাঁটি তৈরির চেষ্টায় ছিল চিন। এখান থেকে নজরদারি চালানো হয় আন্দামান ও নিকোবরের দিকে। ভারতীয় বাহিনীর সামরিক কার্যকলাপে নজর রাখাই চিনের লক্ষ্য। ১৯৯৪ সালে এখানেই রেডার স্টেশন তৈরি করে নজরদারি শুরু করে চিন। শোনা গেছে, ওই বছরই কোকো দ্বীপপুঞ্জের পাঁচটি দ্বীপের মধ্যে দুটি চিনকে ইজারা দিয়েছে মায়ানমার। কোকো আইল্যান্ড নিয়ে ভারতের উদ্বেগের বিষয় হলো, চিনকে ওড়িশার উপকূলের বালাসোরে পরীক্ষামূলক পরিসর থেকে ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ ট্র্যাক করার জন্য পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি সুবিধা করে দিয়েছে মায়ানমার। পাশাপাশি বিশাখাপত্তনম থেকে মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরে রামবিলিতে নবনির্মিত নৌসেনা ঘাঁটির কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণেরও সম্ভাবনাও রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা আধিকারিকদের সন্দেহ, চিন ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে প্রায়শই বিমান এবং ব্যালিস্টিক মিসাইল ট্র্যাকার ব্যবহার করে ভারতের কৌশলগত প্রতিরোধের পরিসর, ক্ষমতা জানার জন্য কোকো আইল্যান্ডকে ব্যবহার করছে। যদিও ভারতের কাছে চিনা নাগরিকদের উপস্থিতি যাচাই করার কোনও উপায় নেই।
আরও পড়ুন-নোবেল আশায় জল! কৃতিত্বের জন্য পূর্বসূরী ওবামাকে দুষলেন ট্রাম্প, বিশ্ব রাজনীতিতে উলটপুরাণ
দক্ষিণ চিন সাগরের পাশাপাশি গোটা ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্রুত আধিপত্য বিস্তারের পথে হাঁটতে চাইছে শি জিনপিং সরকার। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, স্যাটেলাইট ছবিতে কোকো আইল্যান্ডে বিমানঘাঁটির সম্প্রসারণ, নতুন শেড/হ্যাঙ্গার এবং আবাসিক/ব্যারাক নির্মাণের কাজ চলছে। অনুমান করা হচ্ছে যে এই ঘাঁটিগুলিতে প্রায় ১,৫০০ সেনা থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও, ছবিতে একটি রাডার স্টেশন এবং নজরদারি সরঞ্জামও দেখা গেছে। যদিও জুন্টা সরকার দাবি করে যে তাদের দেশে একজনও চিনা সেনা নেই। তবুও চিন্দউইন নদীর উত্তর ও পশ্চিমে জুন্টা সরকারের শাসন খুব একটা কার্যকর নয়। ফলে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের উত্তরের ইস্ট দ্বীপ এবং ল্যান্ডফল দ্বীপের অদূরের কোকো দ্বীপে চিনা ফৌজের উপস্থিতি ভারতের নিরাপত্তার পক্ষে আশঙ্কাজনক বলেই প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন।