চিনের তৈরি যুদ্ধবিমান জেএফ-১৭ দীর্ঘদিন ধরেই পাকিস্তানের ভরসার প্রতীক। কিন্তু সম্প্রতি খবর ছড়ায়, পাকিস্তানের হাতে চিন-নির্মিত জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানে ব্যবহারের জন্য রাশিয়ার তৈরি আরডি-৯৩ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে। এই খবরে স্বাভাবিকভাবেই চমকে ওঠে আন্তর্জাতিক মহল। কারণ, রাশিয়া বরাবরই ভারতের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে পরিচিত। সেই দেশই যদি পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করে, তবে তা নিঃসন্দেহে নয়া দিল্লির কাছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।বিরোধী দলগুলি এই ইস্যুতে কেন্দ্রীয় সরকারের কঠোর সমালোচনা করলেও, মস্কো ভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই চুক্তি আসলে দীর্ঘ মেয়াদে ভারতের কৌশলগত অবস্থানকেই ‘সুবিধাজনক’ করবে।
মস্কোর প্রিমাকভ ইনস্টিটিউটের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নতুন চ্যালেঞ্জ বিভাগের প্রধান পিওতর তোপিচকানভ বিরোধীদের সমালোচনাকে ‘অযৌক্তিক’ বলে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, আরডি-৯৩ ইঞ্জিন সরবরাহ হলে ভারত প্রধানত দুটি কারণে লাভবান হবে। প্রথমত, এই চুক্তি স্পষ্ট প্রমাণ করে যে চিন এবং পাকিস্তান যৌথভাবে এখনও রাশিয়ার তৈরি এই ইঞ্জিনের একটি নির্ভরযোগ্য বা কার্যকর দেশীয় বিকল্প তৈরি করতে পারেনি। এরমধ্য দিয়ে তাদের প্রতিরক্ষা শিল্পে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীলতা উন্মোচিত হলো।তোপিচকানভ জোর দিয়ে বলেন, 'যেহেতু জেএফ-১৭ একই রুশ ইঞ্জিন ব্যবহার করছে, তাই ভারতীয় সামরিক বাহিনীর কাছে এই বিমানটি ‘পরিচিত এবং অনুমানযোগ্য’ থাকবে। তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভারত ২০২৫ সালের মে মাসের সংকটের (অপারেশন সিঁদুর) সময় জেএফ-১৭-এর অপারেশনাল কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন রুশ বিশেষজ্ঞ জানান, 'মস্কো অতীতে নয়া দিল্লিকে আশ্বস্ত করেছিল যে আরডি-৯৩ চুক্তিটি সম্পূর্ণরূপে বাণিজ্যিক এবং এতে কোন প্রযুক্তি হস্তান্তর অন্তর্ভুক্ত নেই। অন্যদিকে, ভারতকে অনেক বেশি উন্নত আরডি-৩৩ ইঞ্জিনের লাইসেন্স-সহ প্রযুক্তির হস্তান্তর অনুমোদন করা হয়েছে।' ক্লিমভ প্ল্যান্টে তৈরি করা আরডি-৯৩ ইঞ্জিনটি, এর মূল সংস্করণ আরডি-৩৩-এর তুলনায় বেশি থ্রাস্ট বা শক্তি উৎপাদন করলেও, এর সার্ভিস লাইফ বা কার্যকাল উল্লেখযোগ্যভাবে কম। প্রযুক্তিগতভাবে আরডি-৯৩-এর সার্ভিস লাইফ যেখানে মাত্র ২ হাজার ২০০ ঘণ্টা, সেখানে আরডি-৩৩ ইঞ্জিনের সার্ভিস লাইফ ৪ হাজার ঘণ্টা। বলে রাখা ভাল, ২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকেই একটি ত্রিপক্ষীয় রাশিয়া-চিন-পাকিস্তান চুক্তির অধীনে রাশিয়া জেএফ-১৭-এর জন্য পুরোপুরি সংযোজন করা আরডি-৯৩ ইঞ্জিন সরবরাহ করে আসছে। বর্তমানে পাকিস্তান ইঞ্জিনটির একটি মোডিফায়েড সংস্করণ তৈরির জন্য আগ্রহ দেখালেও, সেই সংস্করণটি এখনও সম্পূর্ণরূপে তৈরি হয়নি। তবে চুক্তির বিষয়ে রাশিয়ার পক্ষ থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিরোধীদের সমালোচনা
এই রুশ প্রতিরক্ষা চুক্তির খবর প্রকাশ হওয়ার পরই জাতীয় রাজনীতিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্পষ্ট জবাব চেয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, কেন ভারতের ‘এক সময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কৌশলগত মিত্র’ রাশিয়া, চিনের তৈরি জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন সরবরাহ করে পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। পাল্টা জবাবে কংগ্রেসকে আক্রমণ করেছেন বিজেপি। তারা এই খবর প্রচারকে ‘বেপরোয়া তথ্য যুদ্ধ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।