প্রায় ৩০ ঘণ্টা পর বালোচিস্তানে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে পাকিস্তান সেনার অভিযান শেষ হয়েছে। মুক্ত করা হয়েছে অপহৃত ট্রেন থেকে ৩০০-র বেশি পণবন্দিকে। বিদ্রোহীরা সকলেই নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে, বালোচিস্তানে অপহৃত ট্রেন থেকে মুক্তি পেয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা বর্ণনা করলেন যাত্রীরা। বিদ্রোহীদের হাত থেকে বাঁচতে কী ভাবে তাঁরা লুকিয়েছিলেন, কী ভাবে প্রতিনিয়ত সন্তানদের বাঁচানোর চেষ্টা করে গিয়েছেন, কী কী দেখেছেন, মুক্তির পর সেই ঘটনাবলির ধারাবাহিক বর্ণনা দিয়েছেন অনেকে। তাঁরা জানিয়েছেন, ট্রেন বিদ্রোহীদের দখলে চলে যাওয়ার পর মুহুর্মুহু গুলি-বিস্ফোরণের শব্দে মনে হচ্ছিল, এটাই পৃথিবীতে তাঁদের শেষ দিন।
আরও পড়ুন -Three-Language Policy: ‘আমি নিজে ৭-৮টি ভাষা জানি’, ত্রিভাষা নীতিকে সমর্থন সুধা মূর্তির
ইশাক নুর নামের এক যাত্রী মুক্তির পর বিবিসিকে বলেন, ‘গুলির পর গুলি চলছিল। আমরা কোনও রকমে দমবন্ধ করে বসেছিলাম। কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না।’ মহম্মদ আশরাফ বলেন, ‘যাত্রীরা সকলে প্রচণ্ড ভয়ে ছিলেন। যেন মনে হচ্ছিল, এটাই পৃথিবীর শেষ দিন।’ সন্তানদের আড়াল করে বসেছিলেন আশরাফ এবং তাঁর স্ত্রী। যাতে কোনও ভাবে গুলি তাঁদের দিকে চলে এলে আগে বাবা-মায়ের গায়ে লাগে। সন্তানেরা যাতে বেঁচে যায়।আরেক এক যাত্রী এএফপি-কে জানিয়েছেন, সশস্ত্র বন্দুকধারীরা যাত্রীদের পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন কারা বালুচিস্তান প্রদেশের, আর কারা বাইরের। পরিচয়পত্র পরীক্ষা করার পর যাত্রীদের সামনেই কয়েক জন সেনাকে গুলি করেন বিদ্রোহীরা।মুহাম্মদ নাভিদ নামে আরেক যাত্রী বলেন, প্রথমেই আমাদের ট্রেন থেকে নামিয়ে জঙ্গিরা পুরুষ ও মহিলাদের আলাদা করে দাঁড় করায়। তারপর মহিলা এবং বয়স্কদের চলে যেতে বলে।
ট্রেন নিজেদের দখলে নেওয়ার পর বালোচ বিদ্রোহীরা নিজেদের মধ্যে কী নিয়ে আলোচনা করছিলেন, মুক্তির পর তাও জানিয়েছেন পণবন্দিরা। মুশতাক মুহাম্মদ বলেন, 'বিদ্রোহীরা মূলত বালোচি ভাষায় নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলেন। তাঁদের নেতা বার বার সতর্ক করে দিচ্ছিলেন। সকলকে সজাগ থাকতে বলছিলেন। বিশেষ করে নিরাপত্তা বাহিনীর গতিবিধির দিকে নজর রাখতে বলা হচ্ছিল। কারও উপর থেকে যাতে নজর না সরে যায়, বার বার সে বিষয়ে সাবধান করে দিচ্ছিলেন বিদ্রোহীদের নেতা।’ মুশতাক জানিয়েছেন, এই হামলা তিনি কখনও ভুলতে পারবেন না। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসকে পাঞ্জাব প্রদেশের গুজরানওয়ালা জেলার বাসিন্দা নোমান আহমেদ জানিয়েছেন, তিনি ওই ট্রেনে ইদের জন্য বাড়ি ফিরছিলেন।তাঁর কথায়, 'আমরা যখন বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পায়, তখন গুলি থেকে বাঁচতে ট্রেনের কামরার দরজা দরজা বন্ধ করে দিলাম।কিছুক্ষণ পর একজন জঙ্গি এসে বাকি যাত্রীদের থেকে মহিলা এবং বয়স্কদের আলাদা করে নিয়ে যায়। কয়েকজন আহত যাত্রী ট্রেনের মধ্যে ৫থেকে যায়। তারা না বেরলে জঙ্গিরা তাদের উপরে গুলি চালায়।
আরও পড়ুন -Three-Language Policy: ‘আমি নিজে ৭-৮টি ভাষা জানি’, ত্রিভাষা নীতিকে সমর্থন সুধা মূর্তির
কোয়েটা থেকে পেশোয়ারের দিকে যাওয়ার পথে বালোচিস্তানের বোলানে জাফর এক্সপ্রেস অপহরণ করেন বিদ্রোহীরা। ট্রেনে ৪৫০ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের পণবন্দি করা হয়। বদলে পাকিস্তানের জেল থেকে বন্দি বিনিময়ের দাবি জানায় বিএলএ। বুধবার বিদ্রোহীরা দাবি করেছিলেন, তাঁরা ৫০ জন যাত্রীকে হত্যা করেছেন। সরকার তাদের কথা না মানলে বাকিদেরও হত্যা করা হবে। ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন বিদ্রোহীরা। মঙ্গলবার থেকেই পণবন্দিদের মুক্ত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাক নিরাপত্তা বাহিনী। মুহুর্মুহু গুলির লড়াই চলছিল। তবে বিস্ফোরক ভর্তি জ্যাকেট পরে মহিলা এবং শিশুদের ‘মানবঢাল’ বানিয়ে লড়ছিলেন বিদ্রোহীরা। পণবন্দিদের নিয়ে যাওয়া হয়েছিল দুর্গম পাহাড়ি এলাকায়। ফলে অভিযানে জটিলতা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের হত্যা করে যাত্রীদের উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে জানাল পাক বাহিনী।