দিল্লির শ্রী শারদা ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়ান ম্যানেজমেন্ট-রিসার্চে অন্তত ১৭ জন শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে স্বঘোষিত ধর্মগুরু স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীকে গ্রেফতার করেছে দিল্লি পুলিশ। আর তারপর থেকেই তাঁর একের পর এক কুকীর্তির কথা প্রকাশ্যে আসছে। পুলিশের হাতে আসছে তাঁর একাধিক হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট, যা থেকে উঠে এসেছে তরুণী ছাত্রীদের শোষণ ও অশ্লীল প্রস্তাবের চিত্র।
সম্প্রতি উদ্ধার হওয়া 'দিল্লির বাবা'র হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটগুলির মধ্যে বিস্ফোরক একটি কথোপকথনে দেখা গেছে, স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী এক তরুণীকে ‘দুবাই শেখ’-এর জন্য একজন সেক্স পার্টনার জোগাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। তিনি এক মেয়েকে লিখছেন, 'একজন দুবাই শেখ সেক্স পার্টনার খুঁজছেন, তোমার কি কোনও ভালো বন্ধু আছে?' জবাবে শিক্ষার্থী বলেন,'কেউ নেই।' চৈতন্যানন্দ তখন ফের জিজ্ঞাসা করেন, 'এটা কী করে সম্ভব?' তখন শিক্ষার্থী জানান, 'আমি জানি না।' এরপর দিল্লি বাবা বলেন, 'তোমার কোন ক্লাসমেট? জুনিয়র?' এখানেই শেষ নয়, অন্য চ্যাটগুলিতে ওই স্বঘোষিত ধর্মগুরুকে একাধিক ছাত্রীকে বারবার ‘সুইটি বেবি ডটার ডল’ বা ‘বেবিইইই’-এর মতো শব্দে সম্বোধন করতে দেখা গেছে। তিনি দিনে-রাতে অযথা বারবার মেসেজ পাঠাতেন। যেমন-‘বেবি তুমি কোথায়?’ (রাত ১১: ৫৯) এবং ‘গুড মর্নিং বেবি’ (দুপুর ১২: ৪০)। এমনকী, একটি চ্যাটে তিনি এক ছাত্রীকে সরাসরি জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে ঘুমাবে না?’ কিছু কথোপকথনে আবার নাচ-গানের প্রসঙ্গ তোলেন। তিনি লেখেন, 'চলো ডিস্কো ডান্স করি।' শিক্ষার্থী ভদ্রতা দেখিয়ে উত্তর দেন, 'ওয়াও স্যার ওএসএম।'
আরও পড়ুন-বড় বিপদে ট্রাম্প সরকার! ৬ বছর পর 'শাটডাউন' মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চাকরি হারাবে কতজন?
দিল্লির বেসরকারি ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ১৭ জন ছাত্রী স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ করেন। গত আগস্টে এফআইআর দায়ের হওয়ার পর থেকেই চৈতন্যানন্দ পলাতক ছিলেন। দীর্ঘ প্রায় দুই মাস বৃন্দাবন, মথুরা ও আগ্রার ছোট হোটেলে গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ভোররাত সাড়ে ৩টে নাগাদ আগ্রার তাজগঞ্জ এলাকার একটি হোটেল থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ২৭ সেপ্টেম্বর তিনি আগ্রার হোটেলে ‘পার্থ সারথি’ নামে চেক-ইন করেন এবং রুম নম্বর ১০১-এ থাকছিলেন। হোটেল কর্মীদের দাবি, তিনি পুরো সময় ঘরের ভিতরেই ছিলেন। বর্তমানে দিল্লির বাবা পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। পুলিশ তাঁর প্রতিষ্ঠানের তিনজন মহিলার সহযোগীর মুখোমুখি তাঁকে জেরা করবে। এই সহযোগীরা ছাত্রীদের হুমকি দেওয়া এবং আপত্তিকর মেসেজ ডিলিট করতে সাহায্য করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন-উৎসবের মরশুমে স্বস্তি! ফের রেপো রেট অপরিবর্তিত রাখল RBI, জিডিপি বৃদ্ধির পূর্বাভাস
স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতীকে গ্রেফতারের সময় পুলিশের হাতে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম ও নথি। তাঁর কাছ থেকে একটি আইপ্যাড ও তিনটি মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। এরমধ্যে একটি ফোন দিয়ে তিনি তাঁর প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরা ও হোস্টেলের দৃশ্য দূর থেকে পর্যবেক্ষণ করতেন বলে জানা গেছে। এছাড়া, নিজেকে রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের ‘স্থায়ী রাষ্ট্রদূত’ এবং ব্রিকসের ‘বিশেষ দূত’ দাবি করে তৈরি করা জাল ভিজিটিং কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। দু'টি পাসপোর্টও পাওয়া যায়, একটিতে নাম ‘স্বামী পার্থ সারথি’ এবং অন্যটিতে ‘স্বামী চৈতন্যানন্দ সরস্বতী।' জন্মস্থান ও পিতৃপরিচয় নিয়েও ছিল বৈপরীত্য। পুলিশ ইতিমধ্যে দিল্লি বাবার ৮ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। এফআইআর দায়ের হওয়ার পর তিনি ভুয়ো নথি ব্যবহার করে ৫০ লক্ষ টাকারও বেশি অর্থ তুলে নিয়েছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে। উল্লেখ্য, দিল্লি বাবার বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ ওঠে তাঁর প্রাইভেট ম্যানেজমেন্ট ইনস্টিটিউটের ছাত্রীদের কাছ থেকে। এফআইআর-এ বলা হয়েছে, তিনি ছাত্রীদের গভীর রাতে নিজের কোয়ার্টারে ডেকে নিতেন এবং অশ্লীল মেসেজ পাঠাতেন।