'তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার'- বাংলাদেশে পড়ুয়া বিক্ষোভের মধ্যেই স্লোগান ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে যে ‘রাজাকার’ শব্দটাকে কার্যত ঘৃণার চোখে দেখে থাকেন বেশিরভাগ মানুষ, সেই শব্দটাই কীভাবে বাংলাদেশে পড়ুয়া বিক্ষোভের অন্যতম স্লোগান হয়ে উঠল?
পুরো ঘটনার পিছনে আছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য। মুক্তিযোদ্ধাদের সংরক্ষণ-সহ কোটার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়, তার গোড়ার দিকে হাসিনা জানিয়েছিলেন, কোটার বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন আছে। সংবিধান অনুযায়ী, তাঁর কিছু করার নেই। সেইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি যে ‘ক্ষোভ’ দেখানো হচ্ছিল, তা নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করে হাসিনা বলেছিলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতিরাও (সংরক্ষণ) পাবে না। তাহলে রাজাকারের নাতি-পুতিরা (সংরক্ষণ) পাবে?’
হাসিনা আরও বলেছিলেন, ‘(মুক্তিযোদ্ধাদের) অপরাধটা কী? নিজের জীবন বাজি রেখে, নিজের পরিবার-সংসার সবকিছু ফেলে দিয়ে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন, খেয়ে না খেয়ে, কাদামাটির ভিতরে, রোদ-বৃষ্টি-ঝড় - সবকিছুর মোকাবিলা করে, যুদ্ধ করে এই দেশের বিজয় এনে দিয়েছিলেন।’ সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছিলেন যে মুক্তিযোদ্ধারা নিজেদের জীবনের পরোয়া করেননি বলেই আজ ‘গলা বাড়িয়ে কথা বলতে পারছে, নাহলে তো পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হত।’
পড়ুয়াদের স্লোগান, BNP-ও স্লোগান তোলে
আর হাসিনার সেই মন্তব্যের পরই ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার’ স্লোগান তুলতে থাকেন বাংলাদেশের পড়ুয়াদের একাংশ। বিরোধী দল বিএনপিও সেই স্লোগান তুলতে থাকে। এমনকীও ওই স্লোগান নিয়ে গান তৈরি করে ফেলা হয়।
হতাশাপ্রকাশ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর
পড়ুয়াদের একাংশের মুখে ‘রাজাকার’ শব্দটা শুনে চূড়ান্ত উষ্মাপ্রকাশ করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার নায়ক তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মেয়ে হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমার খুব দুঃখ লাগে, যখন শুনি যে ছাত্রছাত্রী বলে (আমি রাজাকার), যখন রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে যে তারা রাজাকার। তারা কি জানে, একাত্তর সালের ২৫ মার্চ সেখানে কী ঘটেছিল?’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, '৩০০ মেয়েকে হত্যা করেছিল। ৪০ জন মেয়েকে রেপ করেছিল। এদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়েছিল। সেই ক্যাম্পে কী অবস্থা হয়েছিল, (সেটা জানে?) এসব অত্যাচার, রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে তারা দেখেনি। তাই নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জা হয় না।'
বাংলাদেশে মৃতের সংখ্যা
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাংলাদেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে। দেশজুড়ে টহল দিয়েছে সেনা। তারইমধ্যে সংবাদসংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, পুলিশ এবং হাসপাতালের তরফে যে খবর পাওয়া গিয়েছে, তাতে ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।