যাদেরকে খুন করত তাদের কাছে একটা নোট মিলত, তুমহারা বাপ প্লাস জিজাজি, সিসি। আসলে তিনি হলেন চন্দ্রকান্ত ঝা। এমনটাই অভিযোগ। একাধিক খুনের পেছনে হাত ছিল এই ব্যক্তিরই। এমনটাই অভিযোগ।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে জানা গিয়েছে, দিল্লির কসাই' নামে পরিচিত কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার চন্দ্রকান্ত ঝাকে কয়েক মাস ধরে তল্লাশি চালানোর পর শনিবার পুলিশ ধরে ফেলল।
৫৭ বছর বয়সি এই অভিযুক্ত। অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় কুমার সাইন জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৭ জানুয়ারি পুরনো দিল্লি রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিহারে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ।
সম্প্রতি 'ইন্ডিয়ান প্রিডেটর: দ্য বুচার অব দিল্লি' নামে একটি তথ্যচিত্রের কারণে ঝা'র মামলাটি জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
কে এই 'দিল্লির কসাই'?
চন্দরকান্ত ঝা ১৯৯৮ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত পশ্চিম দিল্লিতে ১৮ জনকে হত্যা ও টুকরো টুকরো করার জন্য দায়ী ছিলেন, যার ফলে তিনি 'দিল্লির কসাই' নামে পরিচিত হন।
১৯৬৭ সালে জন্ম নেওয়া ঝা ১৯৯০ সালে কাজের খোঁজে বিহার থেকে দিল্লি চলে আসেন। তিনি আজাদপুর মান্ডির কাছে থাকতেন এবং অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার কারণে বিভিন্ন নিম্ন আয়ের চাকরিতে কাজ করেছিলেন। তিনি দু'বার বিয়ে করেছিলেন এবং তার পাঁচটি কন্যাও ছিল।
চন্দ্রকান্ত ঝা-এর কার্যপ্রণালী ছিল মানুষজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা, বিশেষ করে অন্য রাজ্য থেকে যারা আসছে তাদের খাদ্য, আশ্রয় এবং কাজের ব্যবস্থা করা।
তবে, তাদের পক্ষ থেকে যে কোনও ছোটখাটো ভুল হলেই নেমে আসত বিরাট শাস্তি।
চন্দ্রকান্ত ঝা-এর প্রথম নথিভুক্ত খুনের ঘটনা ঘটে ১৯৯৮ সালে, যখন সে দিল্লির আদর্শ নগরে মঙ্গল ওরফে ঔরঙ্গজেবকে হত্যা করে এবং তার দেহাংশ দিল্লিতে ছড়িয়ে দেয়।
১৯৯৮ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০০২ সালে মুক্তি দেওয়া হয়, যার পরে তিনি ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন রেখে যেতে থাকেন।
২০০৩ সালের জুন মাসে চন্দ্রকান্ত ঝা হায়দারপুরে তার সহযোগী শেখরকে মাতাল ও মিথ্যাবাদী ভেবে হত্যা করে। তারপরে সেই বছরের নভেম্বরে তিনি ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ করার জন্য উমেশ নামে বিহার থেকে আসা এক ব্যক্তিকে হত্যা করেন এবং সাহসী পদক্ষেপে তার দেহটি তিহাড় জেলের কাছে ফেলে দেন।
২০০৫ সালে গাঁজা সেবনের অপরাধে গুড্ডু নামের এক ব্যক্তিকে হত্যা করে সে। নারীবিদ্বেষী হওয়ার অভিযোগে ২০০৬ সালে অমিত নামে এক ব্যক্তিকে খুন করে দেহ তিহাড় জেলের বাইরেও ফেলে দেন তিনি।
২০০৬ সালের অক্টোবরে নারীবিদ্বেষে অভিযুক্ত অমিতেরও একই পরিণতি হয়েছিল, তার দেহ তিহাড় জেলের বাইরে ফেলে রাখা হয়েছিল। ২০০৭ সালে উপেন্দ্র নামে এক ব্যক্তি এবং দিলীপ নামে একজনের দেহ পড়েছিল। এদের মধ্যে একজনকে হত্যা করা হয় অবৈধ প্রেমের সম্পর্কের জন্য, অন্যজনকে হত্যা করা হয় আমিষ খাবার খাওয়ার জন্য।
২০১৩ সালে, ঝা অবশেষে তিনটি হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং দুটি মৃত্যুদণ্ড অর্জন করেন যা পরে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে রূপান্তরিত হয়। তবে ২০২৩ সালে ৯০ দিনের জন্য প্যারোলে মুক্তি পান তিনি।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সাইন বলেন, বেশ কয়েক মাস ধরে একটি দল দিল্লি-এনসিআর, হরিয়ানা, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে ঝা এর আগে কাজ করেছে এমন পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।তাকে ধরার জন্য ৫০,০০০ টাকা পুরস্কারও দেওয়া হয়েছিল।
টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে, তিনি তার বাবামায়ের উপর দোষ দিয়েছেন। কারণ তারা ছোটবেলায় তাকে অবহেলা করতেন। তার মা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষিকা। তিনি বাচ্চার তুলনায় কাজকে বেশি অগ্রাধিকার দিতেন। এরপর ঝা কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছিলেন। দিল্লিতে চলে যান। সবজি বিক্রি করতেন। এদিকে পুলিশ তার কাছ থেকে ঘুষ নিয়েছিল বলে অভিযোগ। এরপরই গোটা সিস্টেমের উপর তার রাগ গিয়ে পড়ে। তার প্রথম বিয়েটা খুব কম দিন স্থায়ী হয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিয়ের পরে তাঁদের পাঁচ মেয়ে হয়েছিল।