কেন্দ্র ও তামিলনাড়ু সরকারের ভাষাযুদ্ধ অব্যাহত। এই আবহে ভারতীয় মুদ্রার প্রতীকচিহ্ন বদলে দিয়েছে এমকে স্ট্যালিন সরকার। যা নিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে নতুন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ডিএমকে শাসিত তামিলনাড়ু সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘বিপজ্জনক চিন্তাভাবনা' বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন। কিন্তু যাঁর তৈরি ডিজাইন বদলে ফেলা হল, সেই ডিএমকে নেতার পুত্র তথা অধ্যাপক ডি উদয় কুমার কী বলছেন?
বর্তমানে দেশে টাকার প্রতীকচিহ্ন হিসেবে যে ' ₹' প্রতীকচিহ্ন ব্যবহার করা হয়, তার সৃষ্টিকর্তা তামিলনাড়ুরই কল্লাকুরিচির বাসিন্দা, শিক্ষাবিদ তথা ডিজাইনার ডি উদয় কুমার। তিনি গুয়াহাটি আইআইটির অধ্যাপক। ২০১০ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সময়ে ভারতীয় মুদ্রার নতুন নকশা হিসেবে ' ₹'-র তৈরি করেন তিনি। দেবনাগরী অক্ষর र-র মাত্রার নীচে আড়াআড়ি ভাবে একটি রেখা যোগ করে নতুন প্রতীক চিহ্নটির সৃষ্টি করেন তিনি। তার আগে পর্যন্ত ভারতীয় মুদ্রার প্রতীকচিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হত RS., Re. ২০১০ সালের জুলাই মাসে ' ₹' ভারতীয় মুদ্রার প্রতীকচিহ্ন হিসেবে গৃহীত হয়। সেই সময় আইআইটি বম্বের ভিস্যুয়াল ডিজাইনিং বিভাগে পাঠরত ছিলেন ডি উদয় কুমার। ভিস্যুয়াল কমিউনিকেশন ডিজাইন, স্থাপত্য এবং নকশা নিয়ে গবেষণা, তামিল টাইপোগ্রাফির উপর তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। তাঁর বাবা ধর্মলিঙ্গম স্ট্যালিনের সঙ্গে যুক্ত ছিল। তিনি তামিলনাড়ুর ঋষিবন্দিয়াম কেন্দ্রের ডিএমকের প্রাক্তন বিধায়ক।
এদিকে, দীর্ঘদিন পরে তাঁর তৈরি চিহ্ন বদলে ফেলল তাঁরই রাজ্যের সরকার। তাতে অবশ্য খুব একটা দুঃখিত নন উদয়। সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'ডিজাইনার হিসাবে এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়। আমার তৈরি করা সব ডিজাইন যে সবসময় প্রশংসিত হবে, এমনটা নয়। সমালোচনা হবেই। তবে ডিজাইনার হিসাবে সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।'
তামিলনাড়ু সরকার তাঁর ডিজাইন বদলে নতুনভাবে টাকার চিহ্ন বানিয়েছে, সেটাকে অসম্মান হিসাবে দেখতে চান না উদয়। তাঁর মতে, যে সময়ে ডিজাইন তৈরি করার কথা ছিল সে সময়ে সঠিকভাবে কাজ করতে পেরেছেন। কিন্তু সেটা নিয়ে একদিন বিতর্ক হবে, ভাবতে পারেননি ডিএমকে নেতার পুত্র। জাতীয় চিহ্ন বাতিল করে নিজেদের রাজ্যের জন্য আলাদা করে টাকার চিহ্ন তৈরি করা কি ঠিক? উত্তর দিতে চাননি উদয়।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী স্ট্যালিনের উদ্দেশ্যে তোপ দেগে বলেন, ‘এই পদক্ষেপ আসলে তামিল ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার সমান। সবথেকে আফসোসের এই রুপি সিম্বল একজন তামিল মানুষেরই বানানো। রুপির প্রতীক ডিজাইন করেছিলেন ডিএমকে বিধায়ক এন ধর্মালিঙ্গমের ছেলে ডি উদয় কুমার। সেই চিহ্ন মুছে ডিএমকে শুধু জাতীয়তাবাদেরই অপমান করেনি, একজন তামিল যুবকের দেশের জন্য অবদানকেও অস্বীকার করল। এর থেকে দুঃখের কিছু হয় না।’
উল্লেখ্য, স্বাধীনতার আগে থেকে মাতৃভাষা নিয়ে লড়াই চালিয়ে আসছে তামিলনাড়ু। ১৯৩৭ সালে তদানীন্তন মাদ্রাজ সরকারের প্রধান সি রাজাগোপালাচারী স্কুলে হিন্দি বাধ্যতামূলক করলে রাজ্যজুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলন শুরু হয়েছিল। জাস্টিস পার্টি থেকে দ্রাবিড় নেতা পেরিয়ার সকলে সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিল। হিন্দি বিরোধী আন্দোলনের জেরে ১৯৪০ সালে সেই নীতি পাল্টাতে হয়েছিল।