জল্পনা সত্যি প্রমাণ করে ইতিমধ্যেই 'এক দেশ, এক ভোট' বিল নিয়ে জেপিসি বা যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। সেই কমিটির নেতৃত্ব দেবেন রাজস্থানের পালির সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি পি চৌধুরী।
লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে বলা হয়েছে, জেপিসি গঠনের জন্য নিম্ন কক্ষ থেকে ২১ জন সদস্যের নাম তাঁকে জানাতে হবে। বাকি ১০ জন সদস্য থাকবেন সংসদের উচ্চ কক্ষ বা রাজ্যসভা থেকে।
সংশ্লিষ্ট যৌথ সংসদীয় কমিটিতে এমন একাধিক সাংসদ থাকতে চলেছেন, যাঁরা প্রথমবারের সাংসদ। যাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন কংগ্রেসের প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বঢরা। এছাড়াও, নতুন সাংসদদের মধ্যে রয়েছেন - বিজেপির অনিল বালুনি, সম্বিত পাত্র এবং বাঁসুরী স্বরাজ।
এই জেপিসি-তে লোকসভার তরফে তৃতীয় মহিলা সাংসদ হিসাবে থাকছেন এনসিপি সাংসদ (শরদ পাওয়ার শিবির) সুপ্রিয়া সুলে। অন্যান্য সদস্যের মধ্যে রয়েছেন - বিজেপির অনুরাগ ঠাকুর, কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি, তৃণমূল কংগ্রেসের কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্য়ায় এবং সমাজবাদী পার্টির ধর্মেন্দ্র যাদব। এঁরা সকলেই সাংসদ হিসাবে পুরোনো এবং অভিজ্ঞ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এক দেশ এক ভোট বিলের জন্য জেপিসি গঠন করতে লোকসভায় 'মোশন' পেশ করতে পারেন কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী অর্জুন রাম মেঘাওয়াল। খুব সম্ভবত আজই (১৯ ডিসেম্বর, ২০২৪) সেটা করা হতে পারে।
এই কমিটির সদস্যরা সংবিধান (১২৯তম সংশোধনী) বিল ২০২৪ এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলসমূহ আইন (সংশোধনী) বিল ২০২৪ - এই দু'টি বিলের সমস্ত প্রস্তাব খতিয়ে দেখবেন। যা মূলত একইসঙ্গে দেশের সমস্ত নির্বাচন করার পক্ষে ব্যবস্থাপনা তৈরির কথা বলেছে।
সরকার পক্ষের বক্তব্য হল, এক দেশ এক ভোট নীতি কার্যকর করতে পারলে, তাতে দেশের অনেক লাভ হবে। নির্বাচনের খরচ এবং সময় বাঁচবে। ফলত - উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য অধিক সময় পাওয়া যাবে।
এর উলটো দিকে, বিরোধীদের বক্তব্য হল, এই ব্যবস্থাপনা আদতে ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। কারণ, ভারত হল এমন একটি রাষ্ট্র, যা আদতে অনেকগুলি স্বতন্ত্র রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের সমষ্টি। কিন্তু, এই রাজ্যগুলির প্রশাসন কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্ত নয়। তারা স্বতন্ত্র।
বিরোধীদের অভিযোগ, বর্তমান মোদী সরকার অনেকটা প্রেসিডেন্সিয়াল কাঠামোর ধাঁচে ভারতের প্রশাসন গড়ে তুলতে চাইছে। এক দেশ এক ভোট সেই প্রয়াসেরই প্রথম ধাপ বলে অভিযোগ করছেন বিরোধীরা। তাঁদের দাবি, এভাবে ক্রমে রাজ্য সরকারগুলির অধিকার খর্ব করা হবে।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, এই বিষয়গুলি নিয়ে জেপিসি-র আলোচনায় দুই পক্ষের বিতর্কে পারদ চড়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে। প্রাথমিকভাবে আশা করা হচ্ছে, সংসদের আগামী অধিবেশনেই এই সংক্রান্ত রিপোর্ট পেশ করবে জেপিসি। তবে, প্রয়োজনে জেপিসি-র মেয়াদ বাড়ানোও হতে পারে।